বইয়ের বিবরণঃ
Title | শ্রাবণের বুকে বৈশাখ |
Author | সাদমান সাকিব অভি |
Publisher | ঘাসফুল |
ফাইল ফরম্যাট: | epub, MOBI, Pdf free Download(পিডিএফ ডাউনলোড) |
Edition | 1st Published, 2021 |
Number of Pages | 112 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
বই রিভিউ :
একটা ক্রাইম থ্রিলার লেখার আসল গুণ কোনটা? লেখকের আসল সাফল্য কোথায়? আমি এর আগে কোনো ক্রাইম থ্রিলার বই পড়েছি বলে মনে পড়ে না, থ্রিলার পড়েছি বটে, ক্রাইম থ্রিলার ফিল্মোগ্রাফির সাথেও মোটামুটি পরিচিত বলা যায়৷ আমার মনে হয় ক্রাইম থ্রিলারের সবচেয়ে বড় গুণ বা লেখকের সাফল্য হচ্ছে পাঠককে রিজনেবলি ভড়কাই দেওয়ার ক্ষমতা, পাঠকের মনে হবে যে সে আসলে গল্পটা ধরতে পেরেছে, সে ভাবতে পারছে এর পরে কি হতে চলেছে,
এবং কিছুক্ষণ পরেই সে বুঝতে পারে লেখক তার ভাবনায় জল ঢেলে দিয়েছেন, তাকে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে বলছেন যে তুমি যা ভাবছো, তারও অলটারনেটিভ হতে পারে, সাজানো যেতে পারে অন্য এক সিনারিও৷ এখানেই আসল থ্রিল৷ “শ্রাবণের বুকে বৈশাখ” এমনই একটা গল্পের নাম৷
কোনো এক শ্রাবণের সন্ধ্যায় পুলিশ অফিসার সাদ্দাম চৌধুরী এবং তার সহকারী অফিসার মুরাদ বৈশাখী নামের এক মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তার বাড়িতে যায়৷ সেদিন বৈশাখীর জন্মদিন ছিল, বৈশাখীর লাশ দেখে এবং অন্যান্য আলামত এবং ঘটনাবলী শোনার পর অফিসার সাদ্দাম চৌধুরী চিন্তায় পড়ে যায়, কারণ সেদিন সকালেই তার সাথে কথা হয় এই গল্পের সবচেয়ে রহস্যময় চরিত্রের, যার নাম নীলা৷ নীলা বেশ মায়াবী চেহারার এবং সহজ তবে অস্থির এক মেয়ে, যার একটা বৈশিষ্ট্য হলো তার মাঝে মাঝেই প্রিকগনিশন হয়৷ এটি কিছুটা হুমায়ূন আহমেদের হিমু চরিত্রের ইনটুইশনের মতো, তবুও ভিন্ন৷ সে স্বপ্নে ভবিষ্যতের নানা ঘটনা দেখতে পায়, যেগুলো পরে সত্যে রূপান্তরিত হয়, তবে পুরোপুরি একইভাবে নয়, বাস্তবে ঘটে যাওয়া ঘটনায় থাকে কিছু তফাৎ৷ নীলার সকালে থানায় আসার কারণ সে স্বপ্নে বৈশাখী নামের একটি মেয়েকে খুন হতে দেখেছে, এবং খুনি ছিল সে নিজেই৷ পুলিশ অফিসার সাদ্দাম চৌধুরী, যিনি বেশ একটা ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার, যার কম্প্যারিজনের অভ্যাস খুব বেশি, যার স্মরণশক্তি বেশ ভালো, এবং একজন দারুণ বক্তা, এই কেস সলভ করতে মাঠে নেমে পড়েন৷ এই যাত্রা মোটেও সহজ ছিল না, এই কেসে তাকে ডিল করতে হয়েছে মোট ৬টা ক্যারেক্টারের সাথে, নীলা, বৈশাখী, তীর্থ, অভিলাষ, তাশরিফ এবং সুপ্রিয়া৷ মুখোমুখি হতে হয়েছে একের পর এক প্যাঁচ, জটিলতার৷ ধীরে ধীরে সামনে এসেছে বৈশাখীর সাথে অভিলাষের প্রেম, বৈশাখী এবং তার ভাই তীর্থের পুরোনো জীবন, বৈশাখীর অন্ধত্ব থেকে সুস্থ হবার পরেও ক্যান্সারের লাস্ট স্টেজে এসে জীবনের সংক্ষিপ্ততার কাহিনী৷ এবং এই পুরো গল্পটাই সাদ্দাম চৌধুরী বলেন তার রিটায়ারমেন্ট এর অনুষ্ঠানের বক্তৃতায়, উত্তম পুরুষ ভঙ্গিতে৷ আমি গল্পটা অর্ধেকের মতো পড়ে ভাবছিলাম যে আমি কাহিনীটা ধরতে পারসি, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই বুঝি যে বাস্তবতা অনেক বেশি ভিন্ন৷ প্রতিবার ভাবতেছিলাম এত বেশি প্যাঁচ শেষে কিভাবে সলভ হবে, কিন্তু সাদমান সাকিব অভি বেশ দক্ষতার সহকারেই একের পর এক কেইস এরাইজ করেছে, প্রতি পর্বের শেষে তার অসাধারণ লিটেরারি ইনসাইট দিয়ে সাজিয়েছে পরের পর্বগুলোর প্রিরিকুয়িসাইট, যা আপনাকে হিন্টস দেবে, কিন্তু তাও উন্মুক্ত করবে না রহস্য, এবং শেষটা টেনেছে একটা সম্পূর্ণ অন্যরকম সিনারিও দিয়ে, যেটা রিজনেবল, কিন্তু এক্সপেক্টেড না৷
রিভিউয়ার হিসেবে বইয়ের ভালো দিকগুলোর সাথে যে বিষয়গুলো আমার ভালো লাগেনি বা ভুল মনে হয়েছে সেটা বলার পালা এবার৷ বলে রাখা ভালো এই জায়গাটায় কিছুটা স্পয়লার আছে৷ প্রথম যে বিষয়টা আমার চোখে লাগে সেটা হলো সাদ্দাম চৌধুরী কেন নীলার পেছনে কাউকে নজর দিতে পাঠায়নি, যখন সে অদ্ভুত হলেও একটা সিরিয়াস কেইস নিয়ে হাজির হয়েছে যেটাকে পুরোপুরি পাগলামি বা অবাস্তব ধরা যায় না, অন্তত মনস্তাত্ত্বিক বিচারে না৷ নীলার কল রেকর্ডস এবং তার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করার ব্যাপারে বই এর কোথাও তেমন কিছু পাইনি যখন সে এই কেসের অন্যতম লিড ছিল৷ সুপ্রিয়া চরিত্রটি এই কেসে বড়ই অদ্ভুত এবং অস্পষ্ট ছিল, এই ক্যারেক্টারকে আরও কিছুটা বিশ্লেষণের প্রয়োজন ছিল বলে মনে করি আমি৷ পাশাপাশি তাশরিফের বৈশাখীর প্রেমে পড়ার ব্যাপারটা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ছিল, যেটা গল্পে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত তাড়াহুড়ো ভাব নিয়ে এসেছে শেষের দিকে৷ কেয়ারটেকারের স্টেটমেন্ট আমার কিছুটা ভুল লেগেছে, সে গেট লাগিয়ে উপরের তলায় উঠে দরজা ভাঙা অবধি টাইমস্প্যান ১০-১৫ সেকেন্ড হওয়াটা আমার কাছে ঘটকা লেগেছে৷ সময়টা আরও একটু বাড়তি হবার কথা, তাছাড়া এসির জায়গাটা পুলিশ আসার আগেই ভরাট করে ফেলার ব্যাপারটা কিছুটা অযৌক্তিক লেগেছে, যেখানে পুরো ঘটনাটা কেউই খেয়াল করেনি৷ অতীত এবং বর্তমানের সময়গুলো বুঝতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল, কারণ সেখানে একটা ফিক্সড টাইম দেখতে পাইনি, একটা সময়ের প্রসঙ্গ কাঠামোর অভাব অথবা অস্পষ্টতা অনুভব করেছি, বিশেষত বৈশাখীর কাছে অভিলাষের স্বীকারক্তির অংশটা যেটা কেসের দুই পর্যায়ে আনা হয়েছে, এবং প্রতিবারে বলা হয়েছে “এক মাস আগে”, এখন এই একমাস আসলে কোনদিন থেকে ধরা হয়েছে তা অস্পষ্ট৷ আরও কিছু খুটিনাটি প্রিন্টিং মিস্টেক এবং সাধারণ ভুল চোখে পড়েছে, কিন্তু সেগুলো নেগলিজিবল৷
সাদমান সাকিব অভির লেখা প্রথম ক্রাইম থ্রিলার বই এটি৷ এবং এটা অস্বীকার করার কিছু নেই যে তার লেখার আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে৷ মানুষ প্রতিনিয়ত উন্নত হয়৷ কিন্তু তার লেখার হাত অসাধারণ সুন্দর, গভীর তার চিন্তাভাবনা, এনালাইসিস৷ ইনশা আল্লাহ আমি বিশ্বাস রাখি ভবিষ্যতে আমরা তার আরও অনেক অসাধারণ সৃষ্টিকর্ম পাবো৷ শ্রাবণের বুকে বৈশাখ আমায় হতাশ করেনি৷
ডাউনলোড লিংক:
কপিরাইটের কারণে লিংক দেওয়া হচ্ছে না।
কপিরাইটের কারণে লিংক দেওয়া হচ্ছে না।