নবান্ন নাটক PDF Download (বিজন ভট্টাচার্য) + রিভিউ

Nabanna Bijon Bhattacharya PDF download

book: Nabanna Bijon Bhattacharya PDF download – নবান্ন নাটক PDF Download (বিজন ভট্টাচার্য)

বই-নবান্ন
লেখক-বিজন ভট্টাচার্য
ধরন-নাটক
পৃষ্ঠা-১৬৭
মূল্য-১৮০
দেজ প্রকাশনী

১৯৪২ সালের আগস্ট মাসে পুরো দেশ জুড়ে শুরু হলো গণঅভ্যূত্থান। ঔপনিবেশিক স্বার্থ বজায় রাখার শেষ চেষ্টায় ব্রিটিশরা তখন হিংস্র হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভারতের বুকে। এখান থেকে নাটকের শুরু। বিপ্লবী মেদিনীপুরের প্রতিরোধ থেকে শুরু এর ভূমিকা। নাটকের প্রধান চরিত্র হলো গ্রামের প্রধান সম্মাদার। সে নিজেই প্রাণ দিতে চায়। প্রধানের বৌ পঞ্চাননী ও প্রতিবাদী। প্রধান এর দুই ছেলে শ্রীপতি ও ভূপতি সৈন্যদের গুলিতে মারা গেছে। সরকার যখন গ্রাম উজাড় করে চাষীদের ধান নিয়ে যাচ্ছিল। তখন সমাদ্দার তার গোলার তিন মাড়াই ধান নিজ হাতে পুড়িয়েছে। সে গ্রামের নৌকা আটক করে। তার মুখের ভাষায়, “সত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে আমি প্রাণ দেব। কখনো বলে “চল তো গাঙ বরাবর এগিয়ে গিয়ে বেড় দিয়ে ফেলি গে ওদের।”

তিন মাড়াই ধান পুড়ানোর ফলে , তার পরিবারে সৃষ্টি হয় অভাব। তা থেকে সৃষ্টি হয় উত্তাপ ও কলহ। এক সময় প্রধান মগরার জমি বিক্রি করতে থাকে । দিন দিন অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
গ্রামে কোন ভাবেই চাল সংগ্রহ করতে পারে না। শাক পাতা ডুমুর সিদ্ধ, কচু ঘেঁচু কাকড়া এমনি এক প্রকার অখাদ্য খেয়ে কোন রকম টিকে ছিলো। হঠাৎ আসে সাইক্লোন। তাতে গ্রামের সবাই গৃহহীন হয়। আশ্রয় ও অন্নের জন্য প্রধান সমাদ্দার, তার ভাই পো কুঞ্জ ও নিরজ্ঞন তাদের স্ত্রী রাধিকা ও বিনোদিনী শহরে চলে আসে। ক্ষুধার জ্বালা সহ্য না করতে পেরে কুঞ্জ ও রাধিকা ডাস্টবিনের খাবার ঘেঁটে খায়। তখন এক কুকুরের সাথে তার যুদ্ধ হয়। কুকুর তাকে কামড়ে দেয়। আর তখনি শহরের বড়োকর্তার বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান চলে। এবং সেখানে হাজার খানেক মানুষের আয়োজন। এতবড় অনুষ্ঠান আইনে বাধে কিন্তু , বড়োকর্তার টাকার কাছে কোন ব্যাপার না।

বিজন ভট্টাচার্যের বহুল খ্যাত নাটক হলো নবান্ন। এটি ১৯৪২ সালের বিপ্লব এবং ১৯৪৩ সালের মন্বন্তরের বাস্তব কাহিনী নিয়ে রূপায়িত। ১৯৪২ সালে গণঅভ্যূত্থান আরম্ভ হয়। ব্রিটিশ শাসকরা তাদের শেষ চেষ্টা করে তাদের স্বার্থ রক্ষায়, হিংস্র হয়ে ঝাপিয়ে পড়ে ভারতের বুকে। বাংলায় যুদ্ধের এ অবস্থায় বিপজ্জনক অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া ঘটে। সৈনিক আর উদ্বাস্তুতে ভারত প্রদেশ ভরে যায়। সে সময় রাজনৈতিক আন্দোলন তীব্র হয়। মেদিনীপুট জেলার তমলুক ও কাঁথি মহকুমায় আন্দোলন বিশেষভাবে জঙ্গিরূপ ধারন করে। বিদেশি দ্বারা আক্রমনের আঘাতস্থলের এমন একটি অঞ্চলের বিপ্লব বাংলার সরকার সহ্য করতে প্রস্তুত ছিলো না। এতে করে বিপ্লবীদের দমন করতে সৈন্যবাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর ইউনিট ছড়িয়ে পরে। অকাতরে মারা যায় মানুষ। এবং ব্যপক হারে গ্রেফতার হয়। সরকারি সৈন্যরা গ্রামের নারীদের ধর্ষণ করে, লুটপাট ও করে। গ্রামের প্রধান সমাদ্দার দুই পুত্র এই যুদ্ধের শিকার। প্রধান বলে, সে প্রাণ দিবে তবে শত্রু কে দূর করবে। তার ভাতিজা কুঞ্জ ভয় পেলেও সে এগিয়ে যেতে চায়। এমন কি তার কথা হলো, পুরুষ রা থাকতেও কেন নারীরা জঙ্গলে গিয়ে লুকাবে। পালিয়ে বেড়ানোকে প্রধান ও তার স্ত্রী কেউ পছন্দ করে না। তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায়। যুধিষ্ঠির এর কথায়-যারাই তাদের পথে বাধা হবে। তাদের বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। এই জয় আনতে গিয়ে পঞ্চাননী প্রান দেয়, কিন্তু মান দেয় নি। নাটক শুরু হয়ে মেদিনীপুর এর প্রতিরোধ দিয়ে। সেখানের কৃষক রা তাদের ধান পুড়িয়ে ফেলে সরকার কে ধান দিবে না বলে। বাংলা১৩৫০ এর মন্বন্তর শুরু হয়। দেখা দেয় সাইক্লোন। বন্যায় ভেসে যায় সব। দেখা দেয় খাদ্য সংকট। ডুমুর, কলা, সিদ্ধ কচু এসব একসময় শেষ হয়ে যায়। শুরু হয় মানুষের মৃত্যু চিত্র। গ্রাম ছেড়ে তারা শহরে যাবে তাই দালাল দের কাছে তারা জমি বিক্রি করে। নাটকের প্রধানও দালাল হারুদত্ত এর কাছে জমি বিক্রি করে। কুঞ্জ বাধা দেয়। হারুদত্ত শুধু জমির দালালি করে না। সে যুবতী নারীদের চালন করে শহরে কালীধনের কাছে। আর সে বিভিন্ন সেবাশ্রম নামে নারী ব্যবসায় মেতে উঠে।

এ পর্যায়ে আসে দ্বিতীয় ধাপ। শহরে তো আর এমনি এমনি খাবার জুটে না। তার চিত্র তো কুঞ্জ কে দেখেই বুঝতে পারা যায়। নাট্যকার কলকাতাকে দুর্ভিক্ষ আর মন্বন্তের শহর পরিণত হবার চিত্র আঁকেন। গাছের ছায়ায় মাটির উপর মৃতদেহ পচে। মুখের উপর মাছির ঝাঁক। কেউ সেদিকে দৃষ্টি দেয় না। এমন লাশ কলকাতার ব্যস্ততম রাজপথ লোয়ার সার্কুলার রোডের ফুটপাতে, শেয়ালদা স্টেশনের উল্টা দিকে। ক্যামেরা নিয়ে সাংবাদিক ভিখেরি মা-শিশুর ছবি, হাড় জিড়জিড়ে বৃদ্ধের ছবি তুলে পত্রিকার ব্যবসাকে রমারম করে তুলে। নাটকে তার চিত্র আছে প্রধান সমাদ্দার কে নিয়ে।ভদ্রলোকেরা খোলা বাজারে চাল পায় না। দুর্ভিক্ষে সারা দেশ ছেয়ে গেছে। কিন্তু চোরাবাজারে সবই মিলে। এমন দিনে কালোবাজারিতে হাজার খানেক মানুষ দাওয়াত করে খাওয়াতে দেখা যায়।

১৯৪২ সালের বিপ্লব আর মন্বন্তরে বাস্তব অভিজ্ঞতার ফসল এই নাটক। এই নাটকের অভিনেত্রী বলেছেন, “যে মানুষেরা রাস্তায় দুর্ভিক্ষের মড়া দেখে মুখ ফিরিয়ে গেছে নবান্ন নাটক দেখিয়ে সেই মানুষদের চোখে আমরা জল ঝরাতে পেরেছি। ” একথা বলার পর আর অনুভূতি প্রকাশ এর দরকার পড়ে না।
প্রধান এর কথা-“কুঞ্জ , কুঞ্জ আমি প্রাণ দেব রে। জন্তু জানোয়ারের মতো পালিয়ে বাঁচা!
তুই আমারে ছেড়ে দে। আমার অন্তর জ্বলে গেছেরে কুঞ্জ।” পালাতে গিয়ে রক্ত ঝড়লে সে বলেছে- “এ রক্তের আর দাম! এ রক্তের আবার মায়া!” নাটক শুরু হবার আগে থেকে সে যন্ত্রণাদ্বগ্ধ! নাটকেও তার যন্ত্রনার শেষ নাই। শেষে কি স্বস্তি মিলেছিলো..!

মাখন যখন না খেতে পেয়ে তার সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলো! সে বলে- “আমি ভুলব না যে সুদ্ধ না খেতে পেয়ে ছেলেটা মরে গেল!” যন্ত্রণা লাগে ভীষণ, যন্ত্রণা লাগে আমারও। যে পড়বে তারই লাগবে। প্রধান এর জন্য গলা ভারী হবে সাথে সাথেই।

” আর কত চেঁচাব বাবু দুটো ভাতের জন্য। তোমরা কি সব বধির হয়ে গেছ বাবু কিছু কানে শুনো না? অন্তর কি সব তোমাদের পাষাণ হয়ে গেছে বাবু।” – কি বলব!
বিজন ভট্টাচার্য একজন বাঙালি নাট্যমঞ্চের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব ও সু অভিনেতা। তার নাট্টজীবন শুরু ১৯৪০ সাল থেকে।১৯৪৪ সালে রচনা করেন “নবান্ন” নাটক। এটি ভারতীয় গণনাট্য সংঘের প্রযোজনায় ও শম্ভুমিত্রের পরিচালনায় মঞ্চস্থ হয়।

নবান্ন বিজন ভট্টাচার্য পিডিএফ- 

 [ Download PDF ]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *