আমরা বেশিভাগ মানুষই জানি না জীবনের মূল উদ্দেশ্য কি?এই অজানা তত্ত্বের সন্ধান খুব কম মানুষ ই করতে পারে কিংবা জানতে আগ্রহী হয়।বস্তুত, মানুষ জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে উদাসীন থাকে।কিন্তু ঠিক যখন মানুষ তার কঠিন সময়ের সম্মুখীন হয়,জাগতিক কোন বিষয়ে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় ঠিক তখনই মানুষ তার জীবনের উদ্দেশ্য জানবার জন্য ব্যাকুল আর উদগ্রীব হয়ে উঠে।
ধানমন্ডি আট নম্বর রোডের জামে মসজিদের বৃদ্ধ ইমামের সাথে কথা বলার পর ওমর তার জীবনের মূল উদ্দেশ্য কি জানতে পেরেছে।তাঁর সাথে কথা বলার পর তার চিন্তার পরিবর্তন হওয়া শুরু হয়। সে জানতে পেরেছে মানুষ তার জীবনের মূল উদ্দশ্য সম্পর্কে উদাসীন থাকার একমাত্র কারণ হল “ভোগ”।পার্থিব বস্তু আহরণ ও ভোগের মানসিকতা মানব চরিত্রের আচরণে এমন পরিবর্তন নিয়ে আসে যে তা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে পুঁজিবাদ, সাম্যবাদের মত নানান মতবাদের আবির্ভাব হতে শুরু করে।ওমর বুঝতে পেরেছে যে এ সকল মতবাদ মানুষকে দিনের পর দিন পরাধীন করে তুলছে।মানুষকে তার অসীম এবং অসম লোভ লালসার দাসে পরিণত হচ্ছে।
ওমর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনোমিক্সে অনার্স করছে।সবকিছুই ঠিক মতোই চলছিল কিন্তু হঠ্যাৎ এক দমকা হাওয়া এসে ওমরের জীবনকে এলোমেলো করে দিয়ে যায়।সে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়।হতাশা, একাকিত্ব আর অস্থিরতা থেকে বাঁচতে সে নেশা আর মিউজিকে প্রাণ খোঁজার চেষ্টা করে।কিন্তু তার মনের অস্থিরতার মাত্রা
দিনকে দিন বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে সে অন্ধকারের সাথে মিলিয়ে যাচ্ছিল।অতঃপর তার মায়ের পরামর্শে সে ইমামের সাথে দেখা করে। বিজ্ঞ ইমাম তার জ্ঞান যুক্তিশীল চিন্তা-শক্তির দ্বারা ওমারকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখান।এভাবে ইমামের হাত ধরে ওমর তার বেপরোয়া আর বিশৃঙ্খল জীবন থেকে দ্বীনের পথে ফিরে আসে।
এরপর ঘটনাক্রমে ওমর পাকিস্তানের একটি ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে গিয়ে আফগানিস্তানের খালিদ নামে একজন তা’লিবান যোদ্ধার সাথে পরিচয় ঘটে।তার কাছ থেকেই ওমর আফগানিস্তান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে।সে জানতে পারে আফগানিস্তানকে বিদেশী শক্তির দখল হতে দেশকে মুক্ত করার জন্য এবং আল্লাহ তা’আলার বিধান অনুযায়ী দেশ গড়ার জন্য তা’লিবানরা জিহাদ করছে।খালিদ তাকে আরো জানায় যে তা’লিবানদের এ যুদ্ধ নির্দিষ্ট কোন ধর্মের বিপক্ষে নয় বরং এটি জালিমদের বিপক্ষে ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ। ইসলামে নামাজ -রোজা-যাকাতকে ফরজ করা হয়েছে ঠিক তেমনি জিহাদকে(অন্যায়ের বিপক্ষে ন্যায়ের বাতিলের বিপক্ষে হকের লড়াই) ও ফরজ করা হয়েছে।তাই তা’লিবানরা তাদের জীবনকে জান্নাতের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে বিক্রি করে দিয়ে প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য ।তারা কোন জঙ্গী বা সন্ত্রাসী সংঘটন নয়।ওমর তা’লিবানদের সম্পরকে সবচেযে গুরুত্বপূর্ণ যে তথ্যটি জানতে পারে তা হল তা’লিবানরা নারী শিক্ষার বিপক্ষে নয়।
অতঃপর ওমর আফগানিস্তান এবং তা’লিবানদের মহত উদ্দেশ্যের কথা জানতে পেরে সে খালিদের সাথে আফগানিস্তান আসে এবং ন্যায় প্রতিষ্টা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তা’লিবানদের সাথে যুদ্ধে সামিল হয়।
যুদ্ধে ওমর আহত হয়,পরে খালিদ তার বাড়িতে ওমরকে আশ্রয় দেই।সেখানে তার আসমার সাথে পরিচয় ঘটে। ধীরে ধীরে তাদের একজন আরেকজনের প্রতি সৃষ্টি হয় শ্রদ্ধামিশ্রিত আকর্ষণ। একসময় তাদের এই পবিত্র সম্পর্কের পরিণয় ঘটে।কিন্তু তাদের এই বিয়েটা যখন হয় তখন আফগানিস্তানে আগ্রাসী আমেরিকার আক্রমন শুরু হয়ে গিয়েছে।তাই ওমরকে আবারও যুদ্ধে যায় কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ওমরকে আমেরিকান হাতে বন্দি হয়ে পৃথিবীর সবচাইতে ভয়ংকর জেলে নির্বিচারে এক যুগ কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়েছিল।মূলত কারাদণ্ড ভোগের সময় ওমরের ধৈর্যধারণ,আল্লাহর উপর তায়াক্কুল, সর্বোপরি তার চারিত্রিক দৃঢ়তা একজন প্রকৃত মুমিন ও মুজাহিদের পরিচয় বহন করে।
পাঠ প্রতিক্রিয়া: ঠিক ক’টা বই মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারে তার পরিসংখ্যানটা জানা না থাকলেও এটা বলতে পারি যে বই মানুষের আত্মার প্রশান্তি আর মনের বন্ধ দুয়ার খোলার মন্ত্র বাতলে দেয়, তার স্থান হৃদয়ে না রেখে কোথায় রাখা যায় আর!#আসমান এটি শুধু একটি গল্প নয় এটি জীবনের গল্প,হৃদয়ের গল্প,একটি মৃতপ্রায় আত্মার পুনর্জীবনএর গল্প।এটি একটি সত্য-সুন্দর-পবিত্র ভালোবাসার গল্প।এটি এমন একটি বিশ্বাসের গল্প যার ভিত ঈমান।এটি মিথ্যাকে সত্য দ্বারা জয় করার ইতিহাস।
লেখককের ভাষায় বলতে হয় -“যে গল্প জীবনের চেয়েও বড়।যে গল্প এক মহাযাত্রার গল্প!
(বইটির যে বিষয়গুলো বইটিকে ভিন্নতা দান করেছে:
১)ব্যক্তিস্বাধীনতা,গণতন্ত্র,জাতীয়তাবাদ,পুঁজিবাদ, সাম্যবাদ এ সকল আইডোলজি সম্পর্কে আলোচনা।
২)ইসলামকে একটি আইডোলজি হিসেবে অখ্যায়িত করেছেন।যা দ্বারা অন্য সকল আইডোলজির বিভ্রান্তি ধরিয়ে দেওয়ে যায়।
৩)তা’লিবান সম্পর্কে মিডিয়া আমাদের মধ্যে যে মিথ্যে প্রোপাগান্ডা সৃষ্টি করেছে তার বাস্তব চিত্রায়ন করেছেন।
৪)চীনের উইঘুর মুসলিমদের নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত হবার দিক।
৫)পাকিস্তান ভারত যুদ্ধ বাঁধার কারন হলো পাকিস্তানের অহংকারী জাতীয়তাবোধ।
৬)প্রকৃত মুসলিম কখনো অন্যায়ভাবে হওয়া যুদ্ধকে সমর্থন করে না।আর প্রকৃত মুসলিম কখনো প্রতিশোধ পরায়ণ হয় না।একজন অন্যায়কারী যদি অনুতপ্ত হয় তখন সে তাকে ক্ষমা করে দিয়ে পরম বন্ধু করে নেয়।
(সর্বোপরি ছোট্ট একটি মলাটের মধ্যে এতগুলো বিষয়ের সহজ-সাবলীল সন্নিবেশ সচারচর খুব কম বইয়েই দেখা যায়।))