Title | রঙ মিলান্তি উপন্যাস |
Author | মাহমুদুর রহমান (আবির) |
Publisher | নালন্দা |
ISBN | 9789849509424 |
Edition | 1st Published, 2021 |
Number of Pages | 200 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
‘রঙ মিলান্তি’কে অল্প শব্দে সামারাইজ করা কষ্টকর। এক্ষেত্রে বলবো বইয়ের ফ্ল্যাপটা মোটামুটি যুতসই। অন্যান্য বইয়ের মতো, এরপর কি হবে কি হলো বা গল্পের মাঝ থেকে দু’লাইন তুলে না এনে একটা ভালো ধারণা দেয়া হয়েছে যা বইকে ভালোভাবেই রিপ্রেজেন্ট করে।
‘এই সময়ের সেই স্বপ্নবাজ তরুণদের প্রতিনিধি নাদিম, রিক্তা, বেলা, আরিফ, সজীব, শিহাব, শাহরিয়ার। তাদের চাওয়া-পাওয়া, প্রেম, জীবন-যুদ্ধ, যুদ্ধের মাঝে দর্শন, দর্শনের মাঝে স্বপ্ন। সেই স্বপ্নে ছোপ ছোপ রঙ। অন্যভাবে বললে এই প্রাণগুলোই রঙিন। সেই রঙিন প্রাণের হাত ধরে একটা শান্ত, সুন্দর সময়ের খোঁজে পথ চলার নাম ‘রঙ মিলান্তি’।’
রঙ মিলান্তির চরিত্রগুলোর বয়স প্রায় একই, সকলেই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হলেও অনেকের মধ্যেই বন্ধুত্ব আছে। যেমন নবায়ন নামক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও নাদিমের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকের বন্ধুত্ব।
নাদিম এই উপন্যাসের মূল চরিত্র। মানে মূল চরিত্র অনেককে বলা গেলেও (বা না গেলেও) একদম কেন্দ্রে আছে নাদিম, তবে নায়ক হিসেবে নয়। কেবল একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে যেন, যেন নাদিম একজন প্রম্পটর। যে শুধু দেখছে, সেটা পাঠককে জানাচ্ছে, সাথে নিজের কিছু মতামত দিচ্ছে।
নাদিমের বাবা আছে, মা নেই। এক ছোট ভাই আছে। আর আছে
এক প্রাক্তন প্রেমিকা।
নাদিমের ছোট ভাই আর তার প্রাক্তন প্রেমিকা দৃশ্যপটে খুব অল্প সময় থাকলেও তাদের উপস্থিতিতে বা তাদের হাজির করে লেখক যে বর্ণনা দেন তা কৌতুহলদ্দীপক এবং ব্যক্তিগতভাবে, আমার কাছে সত্য।
এই কাজটাই আরকি লেখক করে গেছেন পুরো বই জুড়ে। নাদিমের মাধ্যমে বিভিন্ন চরিত্রের উপস্থিতিতে প্রেম, দর্শন, রাজনীতি নিয়ে একটা আলোচনা হয়, কিছু ঘটনা উঠে আসে। সেসব আলোচনা হয়তো সবসময় খুব ভারী নয়, তবে এটা জানান দেয়া যে না, একেবারে সবাই রাজনীতি বা দর্শন বিমুখ হয়নি, সবাই প্রেমটাকে অতি পোস্ট মডার্নিস্ট করে তোলেনি।
রাজনীতির আলাপ আসে মূলত তিনটা ঘটনার হাত ধরে। নো ভ্যাট আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। সাথে আসে বর্তমান বাংলাদেশ, মানে উপন্যাস লেখার সময়কাল যেটা, ২০১৮- সেই সময়ের বাংলাদেশের আলাপ। বিশেষত ছাত্ররা এসব দেখলে কিভাবে দেখে? ছাত্র রাজনীতি নিয়ে ছাত্রদের ভাবনা কি? আর ২০১৩ এর শাহবাগ নিয়ে কিছু আলোচনা আছে।
উপন্যাসের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা, আর মোটা দাগে বললে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা।
মাহমুদুর রহমানের বর্ণনাভঙ্গি, উপন্যাসের ভাষা খুবই সুন্দর। এবং আলোচনার সাথে গতিময় দৃশ্যের বর্ণনা, মানে ফিকশন ও নন ফিকশনের যে ব্লেন্ড, সেটা একদম ঠিকঠাক লেগেছে। দু’শো পৃষ্ঠা পড়তে তাই বেগ পেতে হয়না।
চরিত্রায়ণের দিকে দেখলে পরিপূর্ণভাবে চিত্রিত হয়েছে বোধহয় কেবল নাদিম। তার দৈনন্দিন জীবন, বিশ্ববিদ্যালয়, তার মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব- সবটা মিলে ভালোভাবেই গড়ে তুলেছেন লেখক। বাকি চরিত্রগুলো থাকে দৃশ্যের প্রয়োজনেই, কেউ কেউ, যেমন বেলা আর রিক্তাকে অন্যদের চেয়ে একটু বেশি গড়ে তোলা হয়েছে। এই। এই উপন্যাস আমার কাছে চরিত্র নির্ভরের চেয়ে বেশি মনে হয়েছে কাহিনী নির্ভর।
উপন্যাসের শক্তিশালি জায়গা এর প্লটের অভিনবত্বে আর ভাষাতে। জড়তাহীন ভাষার ফলে পড়তে বেগ পেতে হয় না। আর প্লটের অভিনবত্ব কারণ ২০১০ এর পরে, বিশেষত ’১৩ এর শাহবাগের পরে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে কি কোনো উপন্যাস আমরা পেয়েছি? জানামতে, আমি পাইনি। সাথে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এর চরিত্র কেন্দ্র হওয়ায় এই উপন্যাস বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অনেক কিছুই জানায়। এই উপন্যাসের ৭২-৮০ পৃষ্ঠা একটা ভালো সাজেশন দেয়। কেউ পড়লে এপ্লাই করে দেখতে পারেন। নাদিম তার বন্ধুর বাবাকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় কালচার সম্পর্কে বলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া সম্পর্কে বলে, জটিলতা সম্পর্কে বলে। এরপর নাদিমের বন্ধু সজীব পরবর্তীতে জানায় তার আর এখন আগের মতো ‘প্যারা’ লাগে না। পরিবার সাপোর্টিভ হয়ে উঠেছে। আর নাদিমের ছোট ভাইয়ের ক্যাডেট কলেজে পড়ার ব্যাপারটা। শুধু ক্যাডেট কলেজই না, সব এরকম আইসোলেটেড শিক্ষা নিয়ে বোধহয় ভাবা উচিত। এইখানের আলোচনাটা ভালো লাগে।
একটু দুর্বল দিক বা যা আমার পছন্দ হয়নি এর মধ্যে প্রথমেই থাকবে কথোপকথন। এটা লেখকের দুর্বলতা না কি এইভাবে কথা আসলেই বলে (অতিরিক্ত ভাষার মিশ্রন, সংক্ষিপ্তকরণ) এবং আমার পছন্দ হয়নি, সেটা আমি জানি না। সারাটাক্ষণই কানে বেজেছে, চোখে বেঁধেছে কথোপকথন অংশটা।
উপন্যাসের চরিত্রের দিকটা আরও স্ট্রং হওয়া উচিত ছিল। নাদিমের কাউন্টারে কেউ ছিল না, নাদিম যখন অন্যদের কাউন্টার দিচ্ছে বা একটা ব্যাখ্যা দিচ্ছে সেই ব্যাখ্যাটার সাথে আরেকজন সমালোচনা করবে বা একজন স্ট্রং পলিটিকাল চিন্তা রাখে এমন কাউকে দরকার ছিল। যে সময়ের বা যে আন্দোলনের কথা হচ্ছে সে আন্দোলনে অংশ নেয়া কারও শক্তিশালী উপস্থিতি প্রয়োজন ছিল। না থাকার ফলে রাজনীতির যে গল্পটা পড়তে চেয়েছি, সেটা যেন অনুপস্থিতই থেকে যায়। আর একদম শেষ বাক্যটা ব্যক্তিগতভাবে মনে ধরেনি। হয়তো ওখানেই, আরেকটু অন্যভাবে শেষ হতে পারতো উপন্যাসটা।
৩.৫ থেকে ৪ এর মধ্যে দেব রেটিং।
ভাষা, বর্ণনা, গল্প, প্লটের জন্য- ৪
নাদিমের রাজনৈতিক আলোচনার অংশের জন্য দেব ৩।
সব মিলিয়ে, নতুন কিছু পড়তে চাইলে এই সময়ে, ‘রঙ মিলান্তি’ পড়তে পারেন। চিন্তা করার একটা ভালো খোরাক হতে পারে- পক্ষে হোক বা বিপক্ষে। এই সময়ে একটা বই পড়ার পর ভাবাচ্ছে- এটাই অনেক বড় ব্যাপার।