ম্যাসেজ আধুনিক মননে দ্বীনের ছোঁয়া Pdf Download by মিজানুর রহমান আজহারি | Message Mizanur Rahman Azhari pdf download free
শবে মিরাজ:
(۲. حكم الاحتفال بليلة الإسراء والمعراج) الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه-
অতঃপর আমরা এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহ যে, মি’রাজের পবিত্র ঘটনা আল্লাহ্র মহান নিদর্শন সমূহের অন্যতম, যা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর রিসালাতের সত্যতার একটি জ্বলন্ত প্রমাণ এবং আল্লাহর দরবারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উচ্চতম মর্যাদার প্রতীক। সাথে সাথে এটি আল্লাহ রব্বল আলামীনের অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতা ও সৃষ্টিকুলের উপর তার নিরংকুশ একাধিপত্যের দলীলও বটে। আল্লাহ বলেন,
سبحان الذي أسرى بعبده ليلا من المسجد الحرام إلى المسجد الأقصى الذي باركنا حوله لتريه من آياتنا إنه هو السميع البصير (الإسراء 1)-
মহাপবিত্র সেই সত্তা, যিনি স্বীয় বান্দা (মুহাম্মাদ)-কে (কা’বার) মসজিদুল হারাম হ’তে (যেরুজালেমের) মসজিদুল আকৃছা পর্যন্ত রাত্রিকালে ভ্রমণ করিয়েছেন- যে মসজিদের চতুস্পৰ্শকে আমরা বরকতমণ্ডিত করেছি, যাতে আমরা আমাদের কিছু নিদর্শন তাকে দেখাতে পারি। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা (ইসরা/বনু ইসরাঈল ১৭/১)।
এতদ্ব্যতীত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে অবিরতধারায় বহু বর্ণনা এসেছে যে, তাঁকে আসমানে নিয়ে যাওয়া হ’ল এবং আকাশের দরজা সমূহ তাঁর জন্য উন্মুক্ত করা হ’ল। তিনি সপ্তম আকাশ অতিক্রম করলেন। অতঃপর আল্লাহ রব্বল আলামীন তাঁর সাথে কথা বললেন ও পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করে দিলেন।
আল্লাহ প্রথমে ৫০ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বারংবার কাতর অনুরােধে অবশেষে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করা হয়। অতএব ফরয হিসাবে তা পাঁচ ওয়াক্ত হলেও পুণ্যের হিসাবে তা পঞ্চাশ ওয়াক্তের সমান। কেননা (আল্লাহ্র ঘােষণা অনুযায়ী) প্রতিটি পুণ্যকর্ম তার দশগুণ ছওয়াবের সমতুল্য (আন’আম ৬/১৬০)। অতএব সেই মহান সৃষ্টিকর্তার অসংখ্য নেমতের জন্য যাবতীয় প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা।
অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন,
‘তােমরা ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা হতে বিরত থাক। কেননা এই বাড়াবাড়িই তােমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদেরকে (ইহুদী-নাছারাকে) ধ্বংস করেছে।
তিনি আরও বলেন, তােমরা আমার প্রশংসায় বাড়াবাড়ি কর না, যেমন বাড়াবাড়ি করেছে খৃষ্টানরা ঈসা ইবনে মারিয়ামকে নিয়ে। আমি শুধুমাত্র তাঁর একজন বান্দা। অতএব তােমরা আমাকে বল, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। বিস্ময় ও আশ্চর্যের বিষয় এই যে, বহুলােক খুব খুশীর সাথে ও যথেষ্ট কষ্ট স্বীকার করে এই সব বিদ’আতী মজলিসে যােগ দিতে আসে এবং তার সপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করে।
অথচ তারা সাপ্তাহিক জুম’আ ও দৈনন্দিন ফরয ছালাতের জামা’আত সমূহ হ’তে পিছিয়ে থাকে এবং এ সকল ব্যাপারে মােটেই মাথা ঘামায় না। এমনকি সে একবারও মনে করে না যে, সে একটা মহা অন্যায় কাজ করে চলেছে। নিঃসন্দেহে এটা তাদের দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক এবং (শরী’আতের ব্যাপারে) অন্তদৃষ্টির অভাব ও রকমারি পাপাচার ও গুনাহের কাজে অভ্যস্ত হওয়ার ফলে তাদের অন্তরে যে মরিচা ধরে গেছে, এই সকল অপকর্ম তারই বাস্তব ফলশ্রুতি।.
আমরা আমাদের জন্য ও সকল মুসলমানের জন্য আল্লাহ্র নিকটে এসব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ‘মীলাদ’ সমর্থক লােকদের মধ্যে কিছু লােক এমন ধারণা রাখে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বয়ং মীলাদের মাহফিলে হাযির হন এবং সেজন্য তারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সম্মানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে (কিয়াম করে) সালাম জানায় (যেমন, ইয়া নবী সালামু আলায়কা)। এটাই হ’ল সবচাইতে চরম মূর্খতা ও ভিত্তিহীন কর্ম। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কিয়ামতের পূর্বে কবর থেকে বাইরে আসতে পারেন না। পারেন না কোন মানুষের সাথে মিলিত হ’তে কিংবা তাদের কোন মজলিসে যােগদান করতে। তিনি কিয়ামত পর্যন্ত কবরেই থাকবেন এবং তাঁর পবিত্র রূহ তার প্রতিপালকের নিকট মহা সম্মানিত ইল্লীঈনে থাকবে। যেমন সূরায়ে মুমিনূনে এ সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে- ‘অতঃপর তােমরা অবশ্যই মৃত্যুমুখে পতিত হবে। অতঃপর তােমরা কিয়ামত দিবসে অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে’ (মুমিনূন ২৩/১৫-১৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, দিন সর্বপ্রথম আমারই কবর বিদীর্ণ হবে এবং আমিই প্রথম শাফা’আত করব ও আমারই শাফা’আত সর্বপ্রথম কবুল করা হবে।
অতএব তার উপরেই বর্ষিত হৌক তাঁর প্রতিপালকের সর্বোত্তম অনুগ্রহ ও শান্তি! উপরােক্ত আয়াতে কারীমা ও হাদীছ ছাড়াও এই মর্মে অন্যান্য বহু আয়াত ও হাদীছ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সহ দুনিয়ার সমস্ত মৃতব্যক্তি কেবলমাত্র কিয়ামতের দিন কবর হ’তে উঠবেন; এর পূর্বে নয়। এ ব্যাপারে মুসলিম জাহানের সমস্ত আলেমই একমত, কারু কোন দ্বিমত নেই। অতএব প্রত্যেক মুসলমানকে এই সকল বিদ’আত হ’তে সতর্ক থাকা প্রয়ােজন এবং কিছু সংখ্যক মূর্খ ও তাদের অনুগামীরা যেসকল বিদ’আত ও কল্পিত ধর্মানুষ্ঠান সমূহ আবিষ্কার করেছে, যার সপক্ষে আল্লাহ রব্দুল আলামীন কোন দলীল অবতীর্ণ করেননি- ঐ সকল অপকর্ম হ’তে সকলের সাবধান থাকা উচিত। والله المستعان وعليه التكلان ولا حول ولا قوة إلا بالله – অতঃপর অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষিত হৌক রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর। আর এটা হ’ল আল্লাহর নৈকট্য লাভের উৎকৃষ্ট উপায় এবং সকর্ম সমূহের অন্যতম।