Title | আমেরিকা মুসলিমদের আবিস্কার |
Author | মুসা আল হাফিজ |
Publisher | কালান্তর প্রকাশনী (সিলেট) |
ফাইল ফরম্যাট: | Pdf free Download(পিডিএফ ডাউনলোড) |
Edition | 1st Published, 2017 |
Number of Pages | 111 , credit: জসিম উদ্দিন |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
১৪৯২ সাল। ক্রিস্টোফার কলম্বাস তিনটি জাহাজ (শান্তা মারিয়া,পিন্ট, নিনা) নিয়ে ৯০ জন নাবিকসহ স্পেন থেকে রওনা দেন ভারতীয় উপমহাদেশে আসার জন্য। দীর্ঘ দুইমাস আটলান্টিক মহাসাগরে জাহাজ ভাসানোর পর কোনো কূলের দেখা না পেয়ে এক সময় কলম্বাস হতাশ হয়ে পরেন। ১১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার। সাগর অস্থির। তরঙ্গমালা মাতাল হাতে জাহাজ দোলাচ্ছে। এক ভেঙ্গে পড়া নাবিক পাটাতনে দাঁড়িয়ে অজানা শঙ্কায় বিমর্ষ। সে চেয়ে আছে অজানার পানে। হঠাৎ তার চোখে পড়ল , দূরের পানিতে ভেসে আসছে গাছের ডাল। একদম তরতাজা চেরী ফল। কলম্বাস চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন ‘ইউরেকা’ ‘ইউরেকা’ পেয়েছি
পেয়েছি।
১২ অক্টোবর শুক্রবার সকালে রদ্রিগেজ নামক নাবিক দেখতে পেলেন তটভূমি। জাহাজ ভেড়ালো রৌদ্রজ্বল বালুময় উপকূলে। কলম্বাস নামলেন বাহামা দীপপুঞ্জে, রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া দেখে নাম দিলেন ‘সান সানভেদর’। এরপর ক্রমান্বয়ে তারা ক্যারিবীয় অঞ্চলের প্রত্যেকটি দ্বীপ আবিষ্কার করতে থাকেন। সেখানকার মানুষের গায়ের রঙ,দৈহিক কাঠামো দেখে কলম্বাস বুঝতে পারলেন যে,তারা ভারতীয় উপমহাদেশের পশ্চিম দ্বীপাঞ্চলে এসেছেন। এই বিবেচনায় এই দ্বীপগুলোর নাম দিলেন ‘ওয়েস্ট ইন্ডিস’ এবং মানুষগুলোর নাম দিলেন ‘রেড ইন্ডিয়ান’। ১৪৯৭ সালে ক্রিস্টোফার কলোম্বাসের ভ্রমনসঙ্গী আমেরিগো ভেসপুচি বুঝতে পারলেন যে, তারা আসলে ভারতে আসেননি। তারা এসেছেন আমেরিকায়। অতঃপর আমেরিগো ভেসপুচির নামানুসারেই আমেরিকা নামকরণ করা হয়।
আমরা সবাই আমেরিকা আবিষ্কারের কাহিনি এভাবেই জেনে এসেছি। কিন্তু আমেরিকা আবিষ্কারের কাহিনি কি শুধু এতটুকুই? নাকি এর সামনে পেছনে আরও কিছু আছে? চলুন সে উত্তর অন্বেষণ করা যাক।
কথিত আছে যে, বিজয়ীদের হাত দ্বারাই ইতিহাস রচিত হয়ে থাকে। যখন আমরা বলি আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার ; তখন মুসলিমদের আগে আমেরিকায় আগত বিভিন্ন জাতির অস্থিত্বকে ভুলে যাইনা। তারা এখানে এসেছিলেন এবং হারিয়ে ফেলেছিলো বাইরের পৃথিবীর সাথে সমস্ত যোগাযোগ। মুসলিমরাই প্রথম সৃষ্টি করেন সামুদ্রিক যোগাযোগ রোড। রচনা করেন বিভিন্ন ম্যাপ ও বিভিন্ন পথের নির্দেশনা। কলম্বাস সে রোড দিয়েই ভারতে আসতে চেয়ে পৌঁছে যান আমেরিকায়। মূলত তার চেতনায় লুকানো ছিলো ক্রসেডীয় ভাবনা।
৯৪০ সালে আবুল হাসান আলি বিন মাসউদি তার ভূগোলে আমেরিকা ভূখণ্ডকে সুস্পষ্ট করেন।
৯৭৩ সালে আল বেরুনি আমেরিকাকে নিউ ওয়ার্ল্ড নামে অভিহিত করেন। চিহ্নিত করেন তার ভৌগোলিক পথনির্দেশ ।
৯৯৯ সালে ইবনে ফাররুখ জ্যামাইকা ও আমেরিকা উপকূলে অভিযান সম্পন্ন করেন।
১১৭৫ সালে ইদ্রিসি তার বিখ্যাত ভূগোলে আমেরিকার অবস্থান সুস্পষ্ট করেন। পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে একদল স্পেনিশ আরবের পশ্চিম আটলান্টিক অভিমানের বিবরণ পেশ করেন।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে মুসলমান নাবিকেরা আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু আমরা কি ইতিহাসে আমেরিকা আবিষ্কারে মুসলমানদের কোনো অবদান খুঁজে পাই?
পশ্চিমা ইতিহাস মুসলমানদের আবিষ্কারকে চাপিয়ে কলম্বাসের যাত্রাকে হাইলাইট করে নিজেদের মত করে ইতিহাস রচনা করেছেন। এই বই-এ লেখক মুসা আল হাফিজ সেই গোপন ইতিহাস আমাদের সামনে নিয়ে আসার প্রয়াস দেখিয়েছেন। নৌ-ক্রসেড এবং আমেরিকায় এর নির্মমতার দিকেও দৃষ্টিপাত করা হয়েছে বইটিতে। বইটিতে নিয়ে এসেছেন আমেরিকায় মুসলমানদের হাজার বছরের কালপুঞ্জি। সেই কালপুঞ্জি নিয়ে বিস্তারিত জানতে অবশ্যই চোখ রাখতে হবে বইয়ের প্রতিটি পাতায়।
ইতিহাস প্রেমি পাঠকদের কাছে বইটি একটা মাস্টার পিচ বই হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু ইতিহাসে যাদের অনাগ্রহ আছে তাদের কাছে কিছুটা বিরক্ত লাগবে, কারণ লেখক সঠিক ইতিহাস প্রমানার্থে অজস্র সাল, বিভিন্ন লেখকদের গবেষণা পত্র এবং বইয়ের নাম উল্লেখ করেছেন। যা পড়ার স্পিডকে কিছুটা স্থবির করে।
যাই হোক বইটি সবার জন্য সুখপাঠ্য হোক।
america-muslimder-abiskar-pdf