বন বালিকা মুহম্মদ জাফর ইকবাল Pdf Download and Review:
রাহেলা মিতুলের লম্বা চুলগুলো বেণি করে দিল। বেণি দুটোর মাথায় দুটো লাল ফিতা দিয়ে সে শক্ত করে বেঁধে দিয়েছে। তারপর মিতুলের থুতনিতে ধরে তাকে একটু আদর করে দিয়ে রাহেলা বলল, “এখন তুইাঁক্ুলের জন্য রেডি!” মিতুল তার স্কুলের ব্যাগটা হাঁতে নিয়ে বলল, “যাই মা?” রাহেলা বলল, “আগেই না। যাওয়ার আগে কী করতে হয়?” করতে হবেঃ?” “হ্যা, মা। প্রত্যেক দিন করতে হবে ।” “আমার লজ্জা করে আম্মু।” “লজ্জার কিছু নাই ।
ঠিক আছে আমি বলছি, আমার সাথে সাথে তুই বল।” প্রতিজ্ঞা করিতেছি যে_-” প্রতিদিন স্কুলে যাবার আগে মিতুলকে এই প্রতিজ্ঞাটা করে যেতে হয়। যে_” “আমি কখনই কাউকে জানিতে দিব না_-” মিতুল বলল, “আমি কখনই কাউকে জানিতে দিব না-__” “যে, আমি পশুপাখির কথা বুঝিতে পারি-__” “যে, আমি পশুপাখির কথা বুঝিতে পারি_-” “এবং আমি পশুপাখির সাথে কথা বলিতে পারি । “এবং আমি পশুপাখির সাথে কথা বলিতে পারি।” রাহেলা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “বল হে খোদা–” মিতুল বলল, “হে খোদা ।”
“তুমি আমাকে রক্ষা কর এবং_-” “তুমি আমাকে রক্ষা কর এবং_” “আমার আব্বুকে নিরাপদে রাখ ।” “আমার আব্বুকে নিরাপদ রাখ ।” রাহেলার গলা একটুখানি কেঁপে উঠল, “আমার আব্বুকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের কাছে আনিয়া দাও।” মিতুলের গলা কাপল না, শান্ত গলায় বলল, “আমার আব্বুকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের কাছে আনিয়া দাও।” “ফি আমানিল্লাহ।” রাহেলা তার কথা শেষ করল। তারপর দরজার দিকে হাটতে হাটতে বলল, “যাই আম্মু।”
“যাই বলতে হয় না, বল আসি।” মিতুল ফিক করে হাসল, বলল, “আমি যাচ্ছি কিন্তু সেটা বলা যাবে না। বলতে হবে আমি আসি! কী আজব ।” রাহেলা বলল, “মোটেই আজব না। যাওয়ার থেকে আসা অনেক ভালো ।” মিতুল বলল, “আসি মা।” “আয় মা।” মিতুল ঘর থেকে বের হয়ে বাসার সামনে রাস্তায় না গিয়ে প্রথমে বাসায় পিছনের গাছপালা ঘেরা জঙ্গলটার দিকে হাটতে থাকে। প্রতিদিনই সে তাই করে, রাহেলা একধরনের বিস্ময় নিয়ে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে । মিতুল স্কুলে যাবার সময় সেখানে কীভাবে কীভাবে জানি রাজ্যের পাখি এসে হাজির হয়। মিতুল যাওয়া মাত্রই পাখিগুলো কিচিরমিচির করে তাকে ঘিরে ধরে । কোনো কোনোটা তার মাথার ওপর এসে বসে, কোনোটা ঘাড়ে । কোনোটা হাতে । অনেকগুলো তাকে ঘিরে উড়তে থাকে ।
পাখিগুলো নানা রকম বিচিত্র শব্দ করে, কোনো কোনোটা তার গালে মুখ ঘষে। তার মুখে ভানা ঝাপটায়। মিতুল খুবই শান্তভাবে এনে চুমু খায়। কোনো কোনোটা হাতে নিয়ে উড়িয়ে দেয়। রাহেলা দূর থেকে দেখে মিতুল ফিস ফিস করে কথা বলছে, কী বলছে কে জানে? রাহেলা এদিক সেদিক তাকায় । জায়গাটা নির্জন, এমনিতেই কেউ আসে না, হঠাৎ করে কেউ চলে এলে তাকে বিষয়টা বোঝানো একটু কঠিন। এমনিতে অবশ্যি গ্রামের সবাই জানে মিতুল জন্ত-জানোয়ার পশুপাখিকে খুব ভালোবাসে, তার ব্যাগে প্যাকেটের মাঝে তাদের জন্য নানারকম খাবারদাবার রাখে । কেউ আসল কথাটি জানে না যে সে পশুপাখির সাথে কথা বলতে পারে । তাদের ধারণা মিতুল তাদের কিছু না কিছু খেতে দেয় তাই পশুপাখিগুলো তার পিছনে পেছনে ঘুরে ।
রাহেলা জানালায় মুখ লাগিয়ে-গলা উচিয়ে বলল, “মিতুল, মা, অনেক হয়েছে, এখন স্কুলে যা।” স্কুল শুরু হতে এখনও অনেক দেরি কিন্তু রাহেলা জানে, পথে পথে সে সবার গোয়ালে উকি দেবে, সব গরু-ছাগল-কুকুর-বেড়ালকে আদর করে করে যাবে! স্কুলে যেতে তার অনেক সময় লাগে! মিতুল শেষ পর্যন্ত সবগুলো পাখিকে উড়িয়ে দিয়ে জঙ্গলমতো জায়গাটা থেকে বের হয়ে এল । ছয় বছরের ছোট মানুষটা লম্বা লম্বা দিকে তাকিয়ে একবার হাত নাড়ল। রাহেলাও হাসি হাসি মুখ করে হাত নেড়ে দেয়। চোখের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত রাহেলা তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে । দেখতে দেখতে তার মেয়েটির ছয় বছর বয়স হয়ে গিয়েছে_যার অর্থ রাহেলার স্বামী আফজাল ছয় বছর থেকে জেলে । একজন মানুষের কত বড় দুর্ভাগ্য হলে পুরাপুরি নিরপরাধ হয়ে বছরের পর বছর জেলে আটকা পড়ে থাকে? বিষয়টা চিন্তা করলেই রাহেলার শরীরটা ঝিমঝিম করতে থাকে। পুলিশ এসে আফজালকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সেই পুরো