লীলাবতী PDF বই রিভিউ, উক্তি, কাহিনী বিশ্লেষণ (হুমায়ুন আহমেদ)

Last updated on September 6, 2025

বই – লীলাবতী pdf সহ || লেখক – হুমায়ূন আহমেদ || প্রকাশনী – অন্যপ্রকাশ || প্রচ্ছদ মূল্য – ২২৫ টাকা

‘লীলাবতী’ হুমায়ুন আহমেদ বই রিভিউঃ

একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের বিত্তবান,পরোপকারী, কঠোর ও কোমল হৃদয়ের সমন্বয়কারী চরিত্রের একজন সাধারণ পিতা সিদ্দিকুর রহমান ও তার মেয়ে লীলাবতীর কাহিনী এটি। সমসাময়িক দূরত্ব কিংবা ভুল বোঝাবুঝি তাদের আলাদা করতে পারেনি।

সিদ্দিকুর রহমানের সংসারে রয়েছেন তার কন্যা লীলাবতী(যে তার প্রথমা স্ত্রীর কন্যা), তার দ্বিতীয় স্ত্রী মোসাম্মত রমিলা খাতুন(যিনি অসুস্থ ও পাগল প্রায়), তার পুত্র মাসুদ এবং পুত্রবধূ পরীবানু, তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কন্যাদ্বয় জইতরী ও কইতরী। রয়েছে আনিসুর রহমান (গল্পের নায়ক),এছাড়া সিদ্দিকুর রহমানের দুই বিশ্বস্ত কর্মচারী লোকমান ও সুলেমান।

সিদ্দিকুর রহমানের প্রথমা স্ত্রী “আয়না” কে তার দাদিশাশুড়ি “ফুলবানু” খুবই অপছন্দ করতেন যার কারণে সিদ্দিকুর রহমান এর সাথে আয়নার সংসার করা হয়ে উঠে নি।এদিকে সিদ্দিকুর রহমান তার প্রথমা স্ত্রীর প্রতি কোনো দ্বায়িত্ব পালন না করেই আবারও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন এটা নিয়ে লীলাবতীর অনেক ক্ষোভ ছিল বাবার প্রতি…। মায়ের মৃত্যুর পরে লীলাবতী তার বাবার বাড়িতে আসেন এবং দেখেন একজন নির্দয়,অমানবিক ব্যাক্তি কে, যিনি শুধু তার মায়ের সাথেই অন্যায় করেন নি তার দ্বিতীয় স্ত্রীকেও ঘরের ভেতরে তালাবদ্ধ করে রাখে,ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় ইত্যাদি। কিন্তু যত দিন অতিবাহিত হতে থাকে লীলাবতীর সব ধারণা আস্তে আস্তে বদলাতে শুরু করে।সে লক্ষ্য করতে থাকে এই গম্ভীর মানুষটার উপরটা একটা মুখোশ। তার ভেতরেও আবেগ আছে,পরিবারের জন্য ভালোবাসা আছে,পশুপাখির জন্যও তার অনেক ভালোবাসা, একজন প্রকৃতি প্রেমি মানুষ তার বাবা,কিন্তু সেই ভালোবাসা তিনি কাউকে বুঝতে দেননা কিংবা প্রকাশ করেন না।

আনিসুর রহমান (গল্পের নায়ক,একজন বেতনহীন কুঁজা মাস্টার, গুঁজা মাস্টার,ভোঁতা মাস্টার)। সিদ্দিকুর রহমানের বাড়িতে লোজিং থাকেন।আস্তে আস্তে লীলাবতীর প্রতি তার এক ভালোলাগা শুরু হতে থাকে……….. সময়ের বিবর্তন ঘটতে থাকে।সিদ্দিকুর রহমানের বাড়া সংসার আস্তে আস্তে শূন্য হতে থাকে, সিদ্দিকুর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যু, তার পুত্র মাসুদের আত্যহত্যা এবং বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমার কারনে সিদ্দিকুর রহমানের জেল হওয়া……….। এসব নানা কারনে সিদ্দিকুর রহমানের ভরা বাড়ি এখন শূন্য। লীলাবতী সেখানে একা থাকে,গ্রামের মানুষ নানা ধরনের খারাপ আত্মা, ভূত-প্রেত দেখতে পায় বলে সেখানে আর যায়না।লীলাবতী বাবাকে চিঠি লিখে কিন্তু নিজের একা থাকার কথাটা কখনো জানানো হয়না…..।

” মানুষ কখনো পুরোপুরি চলে যায় না।
কিছু-না-কিছু সে রেখে যায়”
( লীলাবতী, হুমায়ুন আহমেদ)

কাহিনী বিশ্লেষণঃ

গল্পের নায়িকা লীলাবতী যে কিনা অপরুপ,অনন্য ও ভিন্ন চরিত্রের নারী। এই মেয়ে জন্ম থেকে মামার বাড়িতে বেড়ে ওঠে। বহু বছর পর সে তার বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে প্রথম বারের মত । গ্রামীন জীবন যাপনের সাথে, বাবার সাথে তার কন্যার সাক্ষাৎ এবং অন্যান্য চরিত্র নিয়ে আরও অনেক কাহিনীর সমন্বয়ে এই উপন্যাস টি আপনাকে বেশ মুগ্ধ করবে।
লীলাবতীর বাবা সিদ্দিকুর রহমান, যার অনেক প্রতিপত্তি। অন্যদিকে এক বিশেষ চরিত্র লীলার সৎ মা রমিলা। যিনি পাগলি কিসিমের মানুষ,তার মধ্যে রয়েছে ভবিষ্যদ্বানী করার এক অদ্ভুত ক্ষমতা। প্রকৃতির সাথে মিল রেখে সিমাসা বলেন তিনি। আরও অনেক চরিত্র রয়েছে। রমিলার ছেলের নাম মাসুদ। সে লুকিয়ে পরীবানু নামের এক সুন্দরী মেয়ের সাথে প্রেম করে বেড়ায়।
পুরো উপন্যাসের বিভিন্ন জায়গায় সিদ্দিকুর রহমানের বাড়ির বর্ণনা অত্যন্ত নিখুঁত ভাবে উঠে এসেছে। বাড়িটির দুটি নাম: শহর বাড়ি আর ভেতর বাড়ি। বাড়ির পেছনের সৌন্দর্যের বর্ণনা ছিলো আরো নিখুঁত। হাজারো পাখ পাখালির মেলা বাড়ির পেছনের গাছ গাছালিতে। লীলাবতী তিন দিনের জন্য এই বাড়িতে বেড়াতে এসে বাড়ির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে আর ফিরে যেতে পারে নি।অপরদিকে রমিলা বানুর ছেলে মাসুদ বাবার উপর জেদ করে ফাঁস নিয়ে মারা যায় অথচ তার স্ত্রী পরীবানু তখন অন্তঃসত্ত্বা।
উপন্যাসের একটি টার্নিং পয়েন্ট হচ্ছে মাসুদের মৃত্যু। মাসুদের মৃত্যুর পর পরীবানুর যমজ সন্তান হয় এবং পরীবানুর দ্বিতীয় বিয়ে হয় লীলাবতীর মামা মঞ্জুর সাথে।
তেমনি আরেকটি চরিত্র আনিস,যে কিনা অজানা টানে বাঁধাই করা মোটা মোটা চারটে খাতায় লক্ষাধিক বার ‘লীলাবতী’ শব্দটি লিখছে। তবে চার নম্বর খাতার শেষ তিনটা পৃষ্ঠা খালি। আর এই অসম্পূর্নতাকে সম্পূর্ন করতে অপেক্ষারত গল্পের নায়িকা লীলা।
সবমিলিয়ে লীলাবতী হুমায়ূন আহমেদের একটি অসাধারণ উপন্যাস। বইটা পড়ার পর মুগ্ধ হয়েছিলাম। যথেষ্ট সাবলীল এবং সাজানো এই উপন্যাসটি।
পরিশেষে বলব, সকল বইপ্রেমীরা অবশ্যই পড়বেন বইটি।

আলোচনা-সমালোচনাঃ 

গল্পটা সুন্দর, ফ্লো একনাগাড়ে ছিল। কোথাও স্লো হয়নি। পড়তে সর্বোচ্চ ২/৩ ঘন্টা লেগেছে। কিন্তু পড়ার সময় মনে হয়েছে সবটাই চোখে ভাসছে। মনে হচ্ছিল আমি সিদ্দিক সাহেবের মেহমান হয়ে চলে যাই। জ্ই আর ক্ই এর খুনসুটি বেশ ভালো ছিল। আনিস মাস্টারের সাথে হয়ত লীলার একটা প্রেমের গল্প শুরু হতে পারত কিন্তু হয়নি। এই গল্পে প্রেমের কোনো জায়গা নেই‌। জায়গা শুধু বাবা আর মেয়ে। সাথে তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশের। মাসুদ নামের ছেলেটিকে আমার কাছে লেগেছে বেশ বিরক্তিকর। মাসুদ সম্পর্কে লীলার সৎ ভাই। সৎ বললাম কারণ মাসুদের স্বভাব বাকিদের থেকে ভিন্ন। তার রাগ বেশি। হয়ত বাবার মতো স্বভাব। কিন্তু তার কর্মকাণ্ড গুলো হাস্যকর। শেষে এসে ঝোঁকের মাথায় তার বলা কথাগুলো আমাকেও ভাবিয়েছিল। কথা আছে,’A barking dog seldom bites.’ এই কথাই সিদ্দিক সাহেব ও বুঝিয়েছিলেন। অথচ শেষে এসে ছেলেটা সবাইকে চমকে দিয়েছিল। পরীবানুর জন্য আমার খারাপ লেগেছিল কিন্তু পরে ভাবলাম না। যা হয় ভালোর জন্য ই হয়। এইরকম একটা পাগল ছেলের সাথে থাকার থেকে না থাকাই অনেক ভালো। পরীবানুর পরে একটা সুন্দর সমাপ্তি পেয়েছিল। তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়, সে পরিবারে জমজ ছেলে আর স্বামী একটা খাবারের হোটেল চালিয়ে দিনকাল বদলে গিয়েছিল। কিন্তু লীলা! লীলা এসেছিল একজনের হাত ধরে রয়ে গেল পুরো একা। চিঠিতে সে লিখতে চেয়েছিল পুরো একটা বাড়িতে সে একা, একদম একা… এই একাকিত্ব কি কেটেছিল? কে জানে হয়ত কেটেছে। লেখক পাঠকের কল্পনার উপর সব ছেড়ে দিতে পছন্দ করেন এখানেও তাই।

হুমায়ূন আহমেদ এর বইয়ের শেষটা নিয়ে আমার বরাবরই আপত্তি থাকে,কেমন যেন মনে হয় শেষটা পড়ে তৃপ্তি পেলাম না।মনের মধ্যে খচখচানিটা লেগেই থাকে।
বহুদিন পরে আগের পড়া একটি বই হাতে নিলাম,হুমায়ূন আহমেদের লেখা মানেই সাবলীল। পড়তে পড়তে কখন সময় কেটে যায় খেয়ালই থাকে না।লীলাবতী বইটিও তেমনি কাহিনীর শুরু সিদ্দিকীকুর রহমানের বকের দিকে থাকিয়ে থাকার মাধ্যমে, খুবই সাধারণ ঘটনা শুধু একটু ব্যতিক্রম, বকটি রেললাইনে দাড়িয়ে ছিলো,,আর তা লেখক তার লেখার জাদুতে আমাদের চোখের সামনে এনে হাজির করেছেন,সিদ্দিকুর রহমানের কৌতূহলী মনোভাব, ভাবুকতা,পাঠককেও ভাবিয়েছে। কাহিনী বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগের,,সেই সময়ের ভাটি অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য লেখকের বর্ননায় উঠে এসেছে। এছাড়া প্রত্যেকটা চরিত্র নিজ গুণে অসাধারণ হয়ে প্রতীয়মান, যেমনটা হুমায়ূন আহমেদের বইয়ে হয়ে থাকে,মূল চরিত্র সিদ্দিকুর রহমানের কন্যা লীলাবতী হলেও আরো বেশ কিছু চরিত্র মুগ্ধ করার মতো,যেমন সিদ্দিকুর রহমান নিজে,এছাড়া লীলাবতীর সৎ মা,,যিনি মানসিকভাবে অসুস্থ, পরী( লীলাবতীর সৎ ভাইয়ের স্ত্রী) সহ আরো অনেক চরিত্র বেশ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে।
সিদ্দিকুর রহমানে প্রথম স্ত্রী আয়নার কন্যা লীলাবতী। লীলাবতীর জন্মের আগেই আয়না
সিদ্দিকুর রহমানকে ছেড়ে চলে যায়।আর লীলাবতীর জন্মের সময় আয়নার মৃত্যু হয়,,এর বহুবছর পরে লীলাবতী তার পিতার সাথে দেখা করতে আসে,আর এসেই বোধহয় ভাগ্যচক্রে আঁটকে যায়,কাহিনী এগোতে থাকে।
শুরুতেই বলেছি, হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের শেষটায় আমার বরাবরই আপত্তি। এ বইয়ের ক্ষেত্রেও একই,,পড়া শেষে পরী,মঞ্জুদের জন্য ভালোই লাগে,তবে লীলাবতীসহ আরো অনেকের জন্য মনের মধ্যে একটা শূন্যতা কাজ করে।

হুমায়ূন আহমেদ এর বই লীলাবতী উক্তিসমুহ

  1. ★প্রায় মূর্খ মানুষদের সাথে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করে না।আমার দল আলাদা।মূর্খদের সাথে কথা বলার মানে হলো সময় নষ্ট।মূর্খদের কথা শুনবে আরেক মূর্খ।জ্ঞানীর কথা শুনবে জ্ঞানী।
  2. ★মানুষের চোখের জল তীব্র এসিডের মতো ক্ষমতাধর।কঠিন লোহার মতো হৃদয়ও এই এসিড গলিয়ে ফেলে।
  3. ★বিষধার সাপের বিষ আর পুরুষের তেজ-দুটাই এক জিনিস।বিষধর সাপের বিষ শেষ হইয়ে গেলে সাপের মৃত্যু হয়।আর পুরুষের তেজ শেষ হওয়া মানে পুরুষের মৃত্তু।
  4. ★জগত যে রহস্যময় এটা জানো? -কারণ খুব সোজা।যিনি জগত সৃষ্টি করেছেন তিনি রহস্য পছন্দ করেন।তিনি নিজেও রহস্যময়।যে সব মানুষের ভিতর রহস্য আছে তিনি তাদের পছন্দ করেন।যার ভেতরে রহস্য নাই ,তিনি তাদের পছন্দ করেন না।তার প্রতি কোনো আগ্রহ বোধ করেন না।
  5. ★নগরের এক প্রান্তে প্রচুর খাবার কিন্তু কোনো খিদে নেই, অন্য প্রান্তে প্রচুর খিদে কিন্তু কোনো খাবার নেই।
  6. ★জ্বিনের দোযোখ যে পানি দিয়ে তৈরি এটা কি জানো।আগুনের দোযখে এদের কিছুই হবে না।নিজেরাই তো আগুনের তৈরি।এই জন্য আল্লাহ পাক তাদের জন্য বানাইছে পানির দোযখ।সেই দোজখে হাঁটু পানি।চব্বিশ ঘন্টা বৃষ্টি হয়।বৃষ্টির পানি বরফের মতো ঠান্ডা।
  7. ★বড় কষ্ট পেলে মনে বিষ তৈরি হয়।তখন যদি কেউ কাঁদে,মনের বিষ চোখের পানির সঙ্গে বের হয়ে যায়।
  8. ★মানুষ কৌতুহল মেটানোর জন্য অনেক কিছু করে।শুধু যে মানুষ করে তা না।পশু-পাখি,কীতপতঙ্গ সবাই কৌতুহল মেটাতে চায়।তুমি যদি সন্ধা বেলায় একটা কুপি জ্বালাও,অনেক পোকা আগুনে এসে পরে।তাদের কৌতুহল হয় আগুন জিনিষটা কি জানার।জানতে এসে মারা পরে।
  9. ★সব মানুষই অপরাধের মধ্য বাস করে।পায়ের নিচে পরে পিপড়া মারা যায় সেটাও তো অপরাধ।

লীলাবতী পিডিএফ ডাউনলোড করুন-

হুমায়ূন আহমেদ এর বিখ্যাত অসাধারণ উপন্যাস লীলাবতী পিডিএফ লিংকঃ-

lilaboti humayun ahmed pdf download link1 – link2 – অনলাইন রিডিং 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *