মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর পিতার নাম আব্দুল্লাহ আর মাতার নাম আমিনা। এখানে মহানবী সাঃ এর জীবনী রচনা ৫০০ শব্দ, ৩০০ শব্দেরও বেশী pdf ও তাঁর পুরো পরিচয় বর্ণনা করা হলো-
- নামঃ মুহাম্মাদ মুস্তফা
- উপনামঃ আবুল কাসেম
- উপাধিঃ আল আমিন
- গোত্রঃ কুরাইশ
- বংশঃ হাশেমী
- জন্মঃ ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার, ৫৭০ খ্রিঃ
- জন্মস্থানঃ মক্কা
- জন্ম সময়ঃ রাত অতিবাহিত হয়ে প্রত্যুষে
- পিতাঃ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব
- মাতাঃ আমিনা বিনতে ওয়াহহাব
- দুধ মাতাঃ হালিমা
- দাদাঃ আব্দুল মুত্তালিব
- দাদিঃ ফাতিমা
- নানাঃ ওয়াহহাব বিন আবদে মানাফ
- নানিঃ বোররা বিনতে ওমজা
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম তারিখ
রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ, সোমবার। শুক্লা দ্বাদশীর অপূর্ণ চাঁদ সবেমাত্র অস্ত গিয়েছে। সুবহে সাদিকের সুখ-নূরে পূর্ব আসমান রাঙা হয়ে উঠেছে। আলো আঁধারের দোল খেয়ে ঘুমন্ত প্রকৃতি আঁখি মেলেছে।
বৃদ্ধ আব্দুল মুত্তালিব তখন কাবাগৃহে বসে আপন গোত্রের লোকদের সাথে নানা বিষয়ে আলাপ করছিলেন। এমন সময় সংবাদ আসল যে, আমিনা এক পুত্ররত্ন প্রসব করেছেন। হর্ষ ও বিষাদে আবদুল মুত্তালিবের হৃদয় ভরে গেলো।
সংবাদ পাওয়া মাত্রই তিনি আমিনার গৃহে উপস্থিত হয়ে আব্দুল্লাহ তনয়ের মুখ দর্শন করলেন। কী সুন্দর জ্যোতির্ময় বেহেশতী মুখশ্রী! আব্দুল মুত্তালিবের চোখ জুড়িয়ে গেলো। আকুল আগ্রহে শিশুটিকে কোলে নিয়ে তিনি তৎক্ষণাৎ কাবা প্রাঙ্গণে এসে তার জন্য প্রার্থনা করলেন।
সাতদিন পরে আরবের চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী আবদুল মুত্তালিব শিশুর আকিকা উৎসব করলেন। মক্কার বিশিষ্ট কোরেশ নেতৃবৃন্দ ও আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াত দেয়া হলো। উৎসব শেষে কোরেশ দলপতিগণ জানতে চাইলেন- শিশুর নাম কী রাখলেন?
“মুহম্মাদ”- কোনো এক অদৃশ্য ইঙ্গিতে আব্দুল মুত্তালিব এই কথা বলে ফেললেন। সকলে শিশুকে আশির্বাদ করে চলে গেলেন।
মহানবী সাঃ এর শৈশবকাল রচনা
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর জন্মের কয়েক দিন পরেই মরুভূমি হতে বেদুঈন নারীরা শিশু সন্তানের অনুসন্ধানে মক্কা নগরীর উপনীত হলো। তখনকার দিনে আরবে এটাই ছিল প্রচলিত প্রথা। সম্ভ্রান্ত আরব পরিবারে কোনো শিশু জন্ম নিলে তার স্তন্যদান এবং লালন-পালনের ভার ধাত্রীর হাতে ন্যস্ত করা হতো। অবশ্য এজন্য ধাত্রীকে উপযুক্ত পুরস্কার ও বেতন দেয়া হত।
ধাত্রীদের সকলেই মনের মত এক একটা শিশু সন্তান লাভ করে ফিরে গেল। কিন্তু মোহাম্মদ ছাড়া অন্য কোনো শিশু হালিমার ভাগ্যে জুটলোনা। তখন হালিমা স্বামীকে ডেকে বললেন- শূন্য হাতে ফিরে গিয়ে লাভ কি? এই এতিম শিশুটিকেই গ্রহণ করি, কী বল?
স্বামী উত্তর দিলেন- নিশ্চয়ই, মোহাম্মদকে গ্রহণ করো। ইহার মধ্য দিয়ে আমাদের নসিব বুলন্দ হইবে। হালিমা তখন শিশু মোহাম্মদকে গ্রহণ করলেন।
হালিমার এক পুত্র, তিন কন্যা ছিল। পুত্রের নাম আব্দুল্লাহ এবং কন্যার নাম আনিসা,হোজায়ফা এবং শায়েমা। শায়েমার বয়স তখন সাত-আট বছরের মত। শিশু মুহাম্মাকে লালন-পালনের কাজে সে সর্বদা মাকে সাহায্য করতো। মুহাম্মাদকে সে বড় ভালোবাসতো।
শিশু মুহাম্মাদকে নিজ গৃহে আনার পরে হালিমা এক আশ্চর্য পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন। তার গৃহপালিত’ পশুগুলি অধিকতর পরিপুষ্ট হয়ে উঠলো এবং অধিক পরিমাণে দুগ্ধদান করতে লাগলো। খেজুর বৃক্ষে প্রচুর পরিমাণে খেজুর ফলতে লাগল। কোন দিক দিয়ে তার আর কোন অভাব অনুভব হল না।
এভাবে দুই বছর কেটে গেল। হালিমা মোহাম্মদকে আমিনার নিকট নিয়ে আসলেন। আমিনা পুত্রের স্বাস্থ্যোজ্জ্বল মধুর মুরতি ও দিব্যকান্তি দেখে মুগ্ধ হলেন। মনে মনে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিতে লাগলেন। হালিমার উপরেও তিনি খুব সন্তুষ্ট হলেন।
এই সময় মক্কায় অত্যন্ত সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব হলো। এ কারণে আমিনা মুহাম্মদকে আরো কিছুদিন হালিমার তত্ত্বাবধানে রেখে দেওয়া সঙ্গত মনে করলেন। বৃদ্ধ মুত্তালিবও এই প্রস্তাব সমর্থন করলেন। পুনরায় মোহাম্মদ হালিমার গৃহে ফিরে চললেন।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবন কাহিনী
হালিমার গৃহে অবস্থান কালে হযরত মুহাম্মদ এর জীবনে একটি অলৌকিক কান্ড ঘটেছিল। একদিন শিশু মোহাম্মদ তাঁর দুধভাই ও অন্যান্যদের সাথে মাঠে মেষ চড়াচ্ছিলেন। এমন সময় একজন ফেরেশতা তাদের সম্মুখে আবির্ভূত হলেন। মোহাম্মদের হাত ধরে একটু আড়ালে নিয়ে গেলেন।
তারপর তাকে চিৎ করে শুইয়ে দিয়ে তার বুক চিরে কি যেন বাহির করলো। মুহাম্মদ সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে রইলেন। দূর থেকে এই ব্যাপার লক্ষ্য করে বালকেরা ভয় পেয়ে দৌড়ে গিয়ে হালিমাকে বললেন- দেখ গিয়ে মোহাম্মদ নিহত হয়েছেন। সংবাদ পেয়ে হালিমা এবং তার স্বামী ছুটে এলেন। দেখলেন বাস্তবিকই মুহাম্মাদ অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। তারা কিছুই বুঝতে পারলেন না।। মূলত এটি ছিল তাঁর সিনা সাফ করার একটি ঘটনা।
মহানবী সাঃ এর স্ত্রীদের নাম
হযরত মুহাম্মাদ (স.) তাঁর জীবদ্দশায় মোট ১৩টি বিবাহ করেছেন। বিবি খাদিজা ছাড়া আর বাকি ১২টি বিবাহ করেছেন ৫১-৬৩ বছর বয়সের মধ্যে, বিবি খাদিজার মৃত্যুর পরে। এক সুমহান আদর্শ ও প্রেরণা দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি এতগুলি বিবাহ করেছিলেন। নারীত্বের মর্যাদা দান, পরিজনদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা অর্জন, অনুরোধ রক্ষা, আদর্শের পূর্ণতা সম্পাদন, কু-সংস্কারের উচ্ছেদ সাধন, আত্ম-ত্যাগের আদর্শ স্থাপন করার জন্যই মূলত তিনি একাধিক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।
হযরত মুহাম্মাদ (স.) জীবনে যে সকল নারীকে বিবাহ করেছেন তাদের নামের তালিকা এবং সংক্ষিপ্ত পরিচয় এবং হযরত কোন বয়সে কাকে বিবাহ করেছেন তা নিন্মে দেখানো হলো-
১। খাদিজা ( বিধবা) – হযরতের বয়স তখন ২৫ বছর
২। সাওদা- ( বিধবা) – হযরতের বয়স তখন ৫১ বছর
৩। আয়েশা- কুমারী- হযরতের বয়স তখন ৫২ বছর
৪। হাফসা ( বিধবা) – হযরতের বয়স তখন ৫৪ বছর
৫। জয়নাব বিনতে খোজাইমা ( বিধবা) – হযরতের বয়স তখন ৫৫ বছর
৬। উম্মে সালমা ( বিধবা) – হযরতের বয়স তখন ৫৫ বছর
৭। জয়নব (জায়েদের পরিত্যক্তা স্ত্রী) – হযরতের বয়স তখন ৫৬ বছর
৮। জওয়ায়েরা ( বিধবা, বনি মুন্তালিক গোত্র) – হযরতের বয়স তখন ৫৬ বছর
৯। রায়হানা (ইহুদিনী, বিধবা) – হযরতের বয়স তখন ৫৭ বছর
১০। মেরী (খ্রিষ্টান, অপহৃতা, বিধবা) – হযরতের বয়স তখন ৫৭ বছর
১১। সফিয়া ( কিনানার স্ত্রী, বিধবা, ইহুদিনী) – হযরতের বয়স তখন ৫৮ বছর
১২। উম্মে হাবিবা (আবু সুফিয়ানের কন্যা, বিধবা) – হযরতের বয়স তখন ৫৮ বছর
১৩। মায়মুনা (বৃদ্ধা, বিধবা) – হযরতের বয়স তখন ৫৯ বছর