Sheikh Rasel Amader Bondhu rocona | শেখ রাসেল রচনা ২০০ শব্দ, ৫০০, ১০০০ শব্দ with PDF:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের ভক্ত । তাঁর অনেক বই তিনি পড়েছেন । বার্ট্রান্ড রাসেল কেবল মাত্র একজন দার্শনিকই ছিলেন না বিজ্ঞানীও ছিলেন । বার্ট্রান্ড রাসেল ছিলেন পারমাণবিক যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের একজন বড় মাপের বিশ্ব নেতাও । বিশ্ব শান্তি রক্ষার জন্য বার্ট্রান্ড রাসেল গঠন করেছিলেন- ” কমিটি অফ হান্ড্রেড ” । রাসেলের জন্ম দু’বছর পূর্বেই ১৯৬২ সালে কিউবাকে কেন্দ্র করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেনেডি এবং সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী ক্রুশ্চেফ এর মধ্যে স্নায়ু ও কূটনৈতিক যুদ্ধ চলছিল । যেটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল , ঠিক তখনই বিশ্ব মানবতার প্রতীক হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল । আর তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বঙ্গবন্ধু তার কনিষ্ঠ পুত্রের নামকরণ করেন রাসেল ।
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ সন্তান :
সময়টা ছিল লড়াই আর যুদ্ধের উত্তেজনায় মুখর। ১৯৬৪ সাল। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ঘটে চলেছে ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ওই সময় সমগ্র পাকিস্তানজুড়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডামাডোল।
একদিকে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান, অন্যদিকে সম্মিলিত বিরোধীদলের প্রার্থী কায়দে আজম মুহম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতেমা জিন্নাহ। অনিশ্চয়তা আর অন্ধকারের মাঝেও এ অঞ্চলের মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছে।
যিনি এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটিয়ে বাঙালি জাতিকে এনে দেবেন মুক্তির স্বাদ, তার ঘর আলো করে জন্ম নিল এক ছোট্ট শিশু।
১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবরে ধানমন্ডির বিখ্যাত ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়িটি আলোকিত করে এলো শেখ রাসেল।
রাসেলের যেদিন জন্ম হয় বঙ্গবন্ধু সেদিন ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে প্রচারণায় অংশগ্রহণের জন্য চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন।
সেইদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘রাসেলের জন্মের আগের মুহূর্তগুলো ছিলো ভীষণ উৎকণ্ঠার।
শেখ রাসেল রচনা :
শেখ রাসেল ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান। আজ শেখ রাসেলের ৫৫তম জন্মবার্ষিকী। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ভাই রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার 677, রোড নং 32। বাড়িটি ধানমন্ডি লেকের পাড়ে অবস্থিত। রাসেলের দুই চোখ অসীম বিস্ময়ে ভরা। অন্যদের আকৃষ্ট করার জন্য তার স্বাভাবিক সরলতা এবং সহজাত গুণ ছিল। মা-বাবা ও বড় ভাই-বোনের স্নেহ ও ভালোবাসায় দিন কাটছিল তার। তার এক বড় বোন শেখ রেহানা তার এক লেখায় বলেছেন, ‘(রাসেল) আমার থেকে অনেক ছোট ছিল। জন্মদিনে আমরা তাকে খেলনা বা অন্য কিছু উপহার দিতাম। মা বাড়িতে বিশেষ কিছু রান্না করে আমাদের খাওয়ালেন। দুই বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে রাসেল ছিলেন সবার ছোট। তদনুসারে, তিনি ছিলেন সকলের লালিত ধন। …রাসেলের জন্ম গভীর রাতে। আমি তখন ঘুমাচ্ছিলাম। আমার দ্বিতীয় খালা আমাকে ডাকলেন, ‘তাড়াতাড়ি উঠ, তোমার ভাই আছে’। রাসেল ছিল পুতুলের মতো। কি সুন্দর হাসি ! কিন্তু তিনিও কাঁদতেন। তার স্কুলের নাম ছিল শেখ রিসালুদ্দিন। হাসু আপা তাকে কোলে নিয়ে গান গাইলেন, কবিতা আবৃত্তি করলেন। কামাল ও জামাল ভাইও তাকে কোলে তুলেছিলেন। আমিও কোল থেকে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তাকে নিয়ে গেলাম। রাসেলের জন্মের সময় বঙ্গবন্ধু ঢাকায় ছিলেন না। দলীয় কাজে তিনি চট্টগ্রামে এসেছিলেন। শিশুর জন্মের বার্তা জানার পরপরই তিনি ছুটে যান ঢাকায়। সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুটিকে দেখে খুশি হন বঙ্গবন্ধু। তাকে কোলে নিয়ে রাসেল নাম দেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা জানান, রাসেল নাম রাখার পেছনে কারণ ছিল। ব্রিটিশ দার্শনিক, যুক্তিবিদ, গণিতবিদ, ইতিহাসবিদ, লেখক, প্রাবন্ধিক, সমাজ সমালোচক, রাজনৈতিক কর্মী এবং নোবেল বিজয়ী বার্ট্রান্ড রাসেল ছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রিয় লেখক। কারাজীবনে আরও কয়েকজন লেখকের রচনা ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাসেলের রচনা পড়তেন।
রাসেল একটি উদার পরিবেশে বেড়ে উঠছিল। ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবে সে বেড়ে উঠছিল এবং তার পরিচিত জগতের দিগন্ত প্রসারিত করেছিল। এছাড়া পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে তিনি অন্য সকল সদস্যদের থেকে বিশেষ সুবিধা পেয়েছিলেন। সব মানুষের মতো তারও স্বপ্ন ছিল। সকালের সূর্য এবং সন্ধ্যার তারা তাকে বার্তা পাঠায়, যা আমাদের অজানা। রাসেলের প্রতি বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের ছিল আন্তরিক ভালোবাসা ও স্নেহ, কারণ তিনি ছিলেন মানুষের কনিষ্ঠ সন্তান। বঙ্গবন্ধু যখন বাড়িতে থাকতেন, তখন দলের নেতা-কর্মীসহ বহু মানুষ তাঁর বাসভবনে আসতেন। তারা বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্রকেও মূল্যায়ন করেছিল, কিন্তু রাসেল বিরক্ত হয়েছিলেন তা লক্ষ্য করা গেছে। তিনি (রাসেল) একা থাকতে পছন্দ করতেন। পরিবারের বাড়ির ছেলেদের সাথে খেলতে পছন্দ করতেন। গরু ও মুরগি ছিল তার প্রিয় প্রাণী। পরিবারের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা লক্ষ্য করেন, চিনি দিয়ে ভাজা ডিম রাসেলের প্রিয় খাবার। সে (রাসেল) খুবই বুদ্ধিমান এবং শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল। তিনি সবসময় অন্যদের সাথে খাবার ভাগাভাগি করতেন। কিন্তু, অন্যদের সঙ্গে সহজে মিশতে পারতেন না। আরেকটি বিষয় হল তিনি এক গৃহশিক্ষকের কাছ থেকে একটানা শিখতে পছন্দ করতেন না। তাই প্রায়ই গৃহশিক্ষক বদলাতে হতো। তবুও, গীতালী দাশগুপ্ত তার গৃহশিক্ষক হিসাবে দীর্ঘকাল ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। দুই ভাই শেখ জামাল এবং শেখ রাসেলের মধ্যে মৌখিক ঝগড়া এবং কৌতুকপূর্ণ আড্ডার সম্পর্ক সত্যিই কিছু আকর্ষণীয় উত্তেজনা তৈরি করতে শুরু করেছিল। একটি লেখায় নাসরিন আহমেদ উল্লেখ করেছেন যে জামাল রাসেলকে বিরক্ত করে তার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের কাছে অভিযোগের শেষ নেই। মা ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যেখানে রাসেলকে তার অযাচিত স্বাধীনতা বা দাবি এবং অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও দোষারোপ করতে ব্যবহার করা হয়েছিল।
১১ বছরের নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেলকে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যখন তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। জাতির জনক নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে এই হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর এ.কে.এম. মহিউদ্দিন আহমেদ। মেজর বজলুল হুদাকে দলে রাখা হয়েছিল কারণ তিনি প্রথম ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টের অ্যাডজুট্যান্ট ছিলেন, যেটি রাষ্ট্রপতির বাড়ির পাহারা দিচ্ছিল। দলে মেজর এসএইচএমবি নূর চৌধুরীও ছিলেন। গার্ডের দায়িত্বে থাকা ক্যাপ্টেন আবুল বাশার মেজর ডালিমের অধীনে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিদ্রোহীরা বাসভবনে জোর করে প্রবেশের চেষ্টা করার পর বাসভবন রক্ষা করতে গিয়ে কয়েকজন রক্ষী নিহত হন। শেখ কামাল বাসভবন রক্ষা করতে গিয়ে আহত হন, আক্রমণকারীরা কম্পাউন্ডে প্রবেশ করার পর ক্যাপ্টেন হুদা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কী চাও? বিদ্রোহীদের কাছে। মেজর নূর এবং ক্যাপ্টেন হুদাই বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় গুলি করেন। বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ জামাল, জামালের স্ত্রী রোজী, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসাকে দোতলায় বাথরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মেজর আব্দুল আজিজ পাশাকে গুলি করে এবং রিসালদার মোসলেমউদ্দিন সবাইকে বাথরুমের ভেতরে গুলি করে হত্যা করে। মেজর ফারুক ঘটনাস্থলেই ক্যাপ্টেন হুদাকে মেজর এবং সুবেদার মেজর আবদুল ওয়াহাব জোয়ার্দারকে লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি দেন। ফারুক এসে একটা ট্যাঙ্কে উঠে চলে গেল। বঙ্গবন্ধুর ডাকে রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমদ বঙ্গবন্ধু ভবনে যাওয়ার পথে নিহত হন।
রক্ষীরা সংক্ষিপ্ত গুলির লড়াইয়ের পরে আত্মসমর্পণ করেছিল এবং বাড়ির বাইরে সারিবদ্ধ ছিল। মেজর নূর অভ্যর্থনা এলাকার বাথরুমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাই শেখ নাসেরকে গুলি করে। মেজর পাশা একজন হাবিলদারকে শেখ রাসেলকে হত্যা করার নির্দেশ দেন, যিনি তার মায়ের জন্য কাঁদছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সৈন্যরা বাড়ি লুট করছে। প্রবেশপথে একজন মৃত পুলিশ সদস্যকে দেখা গেছে। মেজর হুদা মোহাম্মদপুরের শেরশাহ রোডে গিয়েছিলেন কাঠমিস্ত্রির কাছ থেকে ১০টি কফিন অর্ডার করতে। মেজর হুদাও পরদিন সেনাবাহিনীর এসকর্টের মাধ্যমে লাশগুলো সরিয়ে নেন।
কেন এমন ছোট্ট ফেরেশতাকে খুনিদের শিকার হতে হলো? এটা অচিন্তনীয় ছিল. সেই যুগে একজন মানুষ তার নিজের রাজ্যে রাজা হতেন, মাত্র 11 বছর বয়সে রাসেলের জীবন শেষ হয়েছিল। প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ডক্টর এম এ ওয়াজেদ মিয়া তার লেখায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের চমকপ্রদ বর্ণনা দিয়েছেন। ওয়াজেদ মিয়া বলেন, ‘… রাসেল দৌড়ে বাড়ির ছেলেদের সারিতে আশ্রয় নিয়েছিল। দীর্ঘদিনের গৃহকর্মী আবদুর রহমান রোমা রাসেলের হাত ধরেছিলেন। কিছুক্ষণ পর একজন সৈনিক রাসেলকে রোমার কাছ থেকে নিয়ে গেল। এ সময় রাসেল কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আল্লাহর রহমতে, আমাকে মারবেন না। বড় হয়ে তোমার বাসায় আমিই হবো। আমার হাসু আপা জার্মানিতে আছেন দুলাভাইয়ের সাথে।
আমি আপনাকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি, আমাকে জার্মানিতে হাসু আপা এবং দুলা ভাইয়ের কাছে পাঠান।’ তখন সেই সৈনিক রাসেলকে মূল ফটকের সিকিউরিটি বক্সে লুকিয়ে রেখেছিল। আধা ঘণ্টা পর একজন মেজর রাসেলকে সেখানে দেখে তাকে গুলি করার জন্য দোতলায় নিয়ে যান।
যাদের রাসেলের মতো ছেলে বা ভাই বা নাতি আছে, তাকে রাসেলের জায়গায় বসান, তাহলে আপনারা অনেকেই বুঝতে পারবেন, কেন আমরা ছাত্রাবস্থায় ১৯৭৬-৮১ সালে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ক্ষতিপূরণ আইন বাতিল ও মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছিলাম। , তার ছোট ছেলে রাসেল এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
ভূমিকা:
বাঙালি জাতির অন্দরমহল থেকে যুগে যুগে আবির্ভাব ঘটেছে অসংখ্য মহান ব্যক্তিত্বের। তাদের কাউকে বা আমরা যথাযথ সম্মান দিয়ে চিরকাল মনে রেখেছি, আবার অনেকেই হারিয়ে গেছেন বিস্তৃতির অতল গহবরে। তবে বাঙালি জাতি বর্তমানে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, তার পেছনে কিছু না কিছু অবদান রয়েছে সেই সকল ব্যক্তিদেরই।
তারা প্রত্যেকেই হয় তাদের জীবন দিয়ে কিংবা তাদের কর্ম দিয়ে বাঙালি জাতিকে যুগিয়ে গিয়েছেন মাথা তুলে দাঁড়ানোর রসদ। আমাদের দেশে বাঙালি জাতির প্রধান নেতা বললেই যে মানুষটির নাম সর্বপ্রথম মাথায় আসে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সেনা অভ্যুত্থানে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নির্মম ও করুণ পরিণতির কথা আমরা সকলেই জানি।
স্বাধীনতা দিবসে স্মরণ করি তার বীর পুত্র শেখ কামাল এবং শেখ জামালকে। তবে প্রায়শই যাকে আমরা ভুলে যাই তিনি হলেন ওই একই পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল। মাত্র ১১ বছর বয়সে নির্মম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া রাসেল হয়তো তার কর্মের দ্বারা বাঙালি জাতির ইতিহাস ও উত্থানে দাগ কেটে রেখে যেতে পারেনি, তবে তার কয়েক বৎসরের জীবন বাঙালি জাতির ইতিহাসকে এতই প্রভাবিত করেছে যে কখন তিনি বঙ্গবন্ধু সর্বকনিষ্ঠ পুত্রের সিংহাসন থেকে নেমে এসে আমাদের বন্ধু হয়ে উঠেছেন, তা আমরা বুঝতেই পারিনি।
শেখ রাসেলের জন্ম:
শেখ রাসেলের জন্মের ইতিহাস বড়ই সুন্দর। ১৯৬৪ সালের অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখ। দেশ তখন ভরা হেমন্তের গন্ধে আকুল হয়ে আছে। গ্রাম্য সভ্যতা ভিত্তিক আমাদের দেশের ঘরে ঘরে তখন নতুন ফসল তোলার আনন্দ। এমনই আনন্দের দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসায় জন্ম গ্রহণ করলেন শেখ রাসেল। তার জন্ম হয়েছিল বড় আপা শেখ হাসিনার ঘরে। সমগ্র বাড়ি জুড়ে সেদিন আনন্দের জোয়ার। জন্মের কিছুক্ষন পর শেখ হাসিনা এসে ওড়না দিয়ে তার ভেজা মাথা পরিষ্কার করে দেন। জন্মের সময় শেখ রাসেল চেহারায় ছিলেন স্বাস্থ্যবান। এ যেন শুধু বঙ্গবন্ধুর পরিবারেরই আনন্দ নয়, সমগ্র জাতির আনন্দ।
নামকরণ:
শেখ রাসেলের নামকরণের পেছনেও এক সুন্দর কাহিনী রয়েছে। বঙ্গবন্ধু বরাবরই ছিলেন বিশ্বশান্তি ও সহাবস্থানের পক্ষপাতী এবং যুদ্ধের ঘোর বিরোধী। এই সূত্র তিনি বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের একজন গুণমুগ্ধ ভক্ত ছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয় বার্ট্রান্ড রাসেল নোবেলবিজয়ী দার্শনিক কিংবা সমাজবিজ্ঞানীই ছিলেন না, ছিলেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের একজন বড় মাপের নেতাও।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সমগ্র পৃথিবী যখন সম্ভাব্য একটি পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কায় সন্ত্রস্ত হয়ে আছে, তখন যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন বার্টান্ড রাসেল। এমনই মহান ব্যক্তির ব্যক্তিত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে বঙ্গবন্ধু তার কনিষ্ঠ পুত্রের নাম রাখেন শেখ রাসেল।
ছেলেবেলা:
শেখ রাসেলের ছেলেবেলা দেশের সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির মতোই বর্ণময়। জন্মের পর খুব বেশি দিন তিনি বাবার সান্নিধ্য পাননি। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে কিছুদিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। প্রথমে ঢাকায় থাকলেও পরে পাকিস্থানে তাকে স্থানান্তরিত করা হয়।
শোনা যায় বড় আপা শেখ হাসিনার সঙ্গে কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে গিয়ে মাত্র দু বছর বয়সের রাসেল তার আপাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, সে বঙ্গবন্ধুকে বাবা বলে ডাকতে পারে কিনা। সামান্য কিছুদিনের জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই রাসেল কাটিয়েছিলেন তার মা এবং বোনদের কাছে। তার পড়াশোনা শুরু হয়েছিল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজে। ১১ বছর বয়সে যখন তার মৃত্যু হয় তখন তিনি সেখানকারই চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন।
নির্মম হত্যাকাণ্ড:
১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট এর সেই অভিশপ্ত রাতের সঙ্গে পরিচিতি আমাদের সকলেরই রয়েছে। সেই রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নির্মম পরিণতির কথা আমরা সকলেই কম বেশি জানি। একদল তরুণ সেনা কর্মকর্তা সেই দিন রাতে শেখ মুজিবের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবন ট্যাংক দিয়ে গিলে ফেলেন। সেইদিন প্রত্যুষে বঙ্গবন্ধু, এবং ব্যক্তিগত কর্মচারীদের সাথে শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়।
শেখ মুজিবের ব্যক্তিগত কর্মচারী মহিতুল ইসলামের কথা অনুযায়ী, রাসেল দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেন, জানতে চান সেনারা তাকেও মারবে কিনা। এমতাবস্থায় একজন সেনা কর্মকর্তা মহিতুলকে এসে মারলে রাসেল তাকে ছেড়ে দেয়। সে কাঁদতে থাকে থাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেই সময় একজন ঘাতক রাসেলকে ভেতরের ঘরে নিয়ে গিয়ে ব্রাশ ফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করে।
কেন শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু?
শেখ রাসেল কেন আমাদের বন্ধু, কীভাবেই বা তিনি আমাদের বন্ধু হয়ে উঠলেন বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে রাসেলের ছেলেবেলার দিনগুলিতে। তার ছেলেবেলার দিনগুলো সম্পর্কে যেটুকু জানা যায় তার অধিকাংশই শিশু বয়সের নিষ্পাপ আত্মভোলা কর্মকাণ্ড। শোনা যায় বঙ্গবন্ধুর বাসায় টমি নামে একটি কুকুর ছিল যার সাথে ছোট্ট রাসেল খেলে বেড়াতো। একদিন খেলার সময় কুকুরটি জোরে ডেকে উঠলে ছোট রাসেলের মনে হয় টমি তাকে বকেছে। শিশু রাসেল তার আপা রেহানার কাছে এসে কাঁদতে থাকেন। আরো শোনা যায় রাসেলের মাছ ধরার খুব শখ ছিল।
মাছ ধরে আবার সেই মাছ সে পুকুরেই ছেড়ে দিত। এই ছিল তার মজা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র জয়ের জন্ম হলে রাসেল জয়কে নিয়ে খেলত সারাদিন। তার স্বভাব ছিল অত্যন্ত দুরন্ত প্রকৃতির। আর এই দুরন্তপনার সঙ্গী ছিল একটি বাইসাইকেল। রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ভেঙে সেই বাইসাইকেলকে সঙ্গী করে রোজ স্কুলে যেত রাসেল। রাসেলের শৈশব আখ্যান যেন আমাদের সকলের শৈশবের গল্প বলে দেয়। তার শৈশবের গল্প কথাগুলির মধ্যে আমরা যেন বারবার নিজেদেরই খুঁজে পাই। পড়াশোনা, খেলাধুলা, দুরন্তপনা এসব নিয়ে রাসেল আমাদের সকলের কাছেই হয়ে ওঠে শৈশবের এক মূর্ত প্রতিমূর্তি।
উপসংহার:
শেখ রাসেল বাঙালি জাতির কাছে এক যুগোত্তীর্ণ ব্যক্তিত্ব। বাঙালি জাতি তার মধ্যে খুঁজে পায় রূপকথার মতো নিজেদের ছেলেবেলাকে। শেখ রাসেলের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকে আপামর বাঙালির শৈশব। অন্যদিকে তার নির্মম মৃত্যুর কাহিনী বারবার মনে করিয়ে দেয় আমাদের দেশের করুন ইতিহাসের কথা। সেই সমস্ত নৃশংস ক্ষমতালোভী মানুষের কথা যারা কেবলমাত্র ক্ষমতার লোভে ১১ বছরের একটি ছোট্ট শিশুকে অবধি রেহাই দেয়নি।
যে জাতি নিজের ইতিহাস থেকে বিস্মৃত হয়, তারা সভ্যতার ইতিহাসে স্থবির হয়ে পড়ে। শেখ রাসেল বাঙালি জাতির সেই ইতিহাসের এক জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি। তার স্মৃতিকে চিরদিন বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশে গঠন করা হয়েছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ। শেখ রাসেলের নামে রাজধানী ঢাকার বুকে নামাঙ্কিত হয়েছে একটি স্কেটিং স্টেডিয়াম। এভাবেই চিরকাল শেখ রাসেল অমর হয়ে থাকবেন বাঙালি জাতির স্মৃতিতে। বাঙালি জাতি শেখ রাসেলের স্মৃতি বুকে নিয়ে তাকে বন্ধুর স্নেহের আসনে বসিয়ে সভ্যতার পথে আরো অগ্রসর হোক, এই কামনা করি।
‘শেখ রাসেল আমাদের বন্ধু’ শীর্ষক এই প্রবন্ধে আমরা শেখ রাসেলের জীবন সম্পর্কে সীমিত শব্দের পরিসরে যথাসম্ভব বিস্তার পূর্বক আলোচনার চেষ্টা করেছি। আশাকরি আমাদের এই প্রয়াস আপনাদের ভাল লেগেছে এবং এই প্রতিবেদন শেখ রাসেলের জীবন সম্পর্কে, তথা তাঁর বাঙালি জাতির বন্ধু হয়ে ওঠা সম্পর্কে আপনার যাবতীয় কৌতুহল নিরসন করতে সক্ষম হয়েছে।
আলোচ্য প্রতিবেদন সম্পর্কে আপনার মতামত নিচে কমেন্ট এর মাধ্যমে আমাদের জানান। আপনার মতামত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া যদি এমনই আরো কোন প্রবন্ধ পড়তে চান, তাও কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।