ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় ঃ
মানুষ তার জীবনকে সবসময়ই একটি উপন্যাসের প্লটে স্থাপন করে যেখানে কোনো ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা ও হতাশা থাকবেনা৷ যেখানে থাকবে অনাবিল সুখ আর শান্তি। তাই জীবনের এই ঔপন্যাসিক প্লটে সামান্য ধাক্কা আসলেই মানুষ দিশেহারা হয়ে যায় এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে যায়৷ এক্ষেত্রে অবশ্যই মুমিনদের হতাশ হলে চলবেনা। কারণ স্বয়ং তাদের রব্ব কুরআনে কারীমে দুইটি আয়াতের মাধ্যমে তাদের নির্দেশনা প্রদান করেছেন৷
وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ ؕ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿۱۵۵﴾ۙ
الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَصَابَتۡہُمۡ مُّصِیۡبَۃٌ ۙ قَالُوۡۤا اِنَّا لِلّٰہِ وَ اِنَّاۤ اِلَیۡہِ رٰجِعُوۡنَ ﴿۱۵۶﴾ؕ
[অর্থ]
‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও- যাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৫-১৫৬)
তাই বিপদে-আপদে আমাদের এই আয়াত দুটিকে স্মরণ করতে হবে। কারণ এটা নিশ্চিত আল্লাহর কাছ থেকে পরীক্ষা৷
এখন প্রশ্ন আসতেই পারে যে যখন আমার ভিতরে হতাশা একেবারেই চেপে যাবে অর্থাৎ আমি কোনোমতেই হতাশা থেকে মুক্ত হতে পারছি না তাহলে আমি কি করবো?
আপনার কি মনে হয়? আপনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে যাবেন আর আপনার রব্ব আপনাকে এই অবস্থায় ছেড়ে চলে যাবেন? না, ভাই৷ আমাদের রব্ব অসীম দয়ালু৷ এর সমাধান মুমিনদের রব্ব কুরআনুল কারীমে আরেকটি আয়াতে দিয়েছেন৷ আল্লাহ বলেন,
اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ تَطۡمَئِنُّ قُلُوۡبُہُمۡ بِذِکۡرِ اللّٰہِ ؕ اَلَا بِذِکۡرِ اللّٰہِ تَطۡمَئِنُّ الۡقُلُوۡبُ ﴿ؕ۲۸﴾
“যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।”[সূরা রাদ,আয়াতঃ২৮]
তাহলে এই আয়াত থেকে সহজেই অনুমেয় যে আল্লাহর যিকির ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তির বাতাস বেয়ে যাবে৷ আলহামদুলিল্লাহ।
অনেকেই ভাবতে পারেন যে মুহাম্মদ(সাঃ) কি হতাশায় পড়তেন না? তিনি হতাশায় নিমজ্জিত হলে কি করতেন?
জ্বী, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিপদ ও সংকটকালে বলতেন-
يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ
” ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু বিরাহমাতিকা আসতাগিছু।(তিরমিজি,মিশকাত শরীফ)
অর্থাৎ “হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! তোমার দয়ায় আমি আশ্রয় প্রার্থনা করি।”
এছাড়াও হতাশা থেকে মুক্তি লাভের জন্য কয়েকটি নির্দেশনা পালন করলে ঈনশা আল্লাহ এ থেকে মুক্তিলাভ পাওয়া যাবে৷
- ১।যখনই আপনি দুশ্চিন্তায় পড়ে যাবেন দুইরাকাত সালাত আদায় করে দোয়া করতে পারেন৷ (আবু দাউদে এ সংক্রান্ত হাদীস আছে)
- ২।সর্বদা আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। কুরআন কারীমে আল্লাহ বলেন,”যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। “[সূরা তালাক,আয়াতঃ০৩]
- ৩।যখনই হতাশায় পড়বেন তখন একা না থাকাই উত্তম। কারণ গুমোট পরিবেশ আপনাকে আরো একাকী করে তুলবে৷
- ৪।হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করতে হবে৷ কারণ হাসি খুশি থাকা স্ট্রেস লেভেল কমাতে সাহায্য করবে ইনশা আল্লাহ।
- ৫।আপনার এই জীবন উপন্যাসে চাওয়া পাওয়ার চাহিদা কমাতে হবে৷ যখনই আপনি বেশী সুখী হতে চাইবেন তখনই আপনার প্রাপ্তির আশা বাড়তেই থাকবে যা হতাশার মূল কারণ।
- ৬।নামাজ শেষে বেশী করে দরুদ পড়া৷ আমল আগের চাইতে বাড়িয়ে দেওয়া এবং আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ মেনে চলা হতাশা থেকে মুক্তি লাভের টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে৷
আল্লাহ আমাদের এই সকল বিষয় মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন ইয়া রাব্ব।