বইয়ের নামঃ— চোখের বালি
লেখকঃ— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বইয়ের ধরনঃ— উপন্যাস
প্রকাশকঃ— রনি আহমেদ জয়
প্রকাশনীঃ— সত্যকথা প্রকাশ
প্রকাশকালঃ— ২০১০ সাল
প্রথম প্রকাশঃ— ১৯০৩ সাল
প্রচ্ছদঃ— কামরুল ইসলাম গোলাপ
মুদ্রণঃ— অক্ষর প্রিন্টার্স
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ— ১৬৪
মূল্যঃ— ১৬০/
“চোখের বালি” বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি সামাজিক উপন্যাস। উপন্যাসটি ১৯০১-০২ সালে ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় এবং ১৯০৩ সালে পুরোপুরি বই আকারে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটির বিষয় “সমাজ ও যুগযুগান্তরাগত সংস্কারের সঙ্গে ব্যক্তিজীবনের বিরোধ। মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের মাতাই প্রধান আর, এক অনভিজ্ঞা বালিকাবধূ, এক বাল্যবিধবা ও তার প্রতি আকৃষ্ট দুই পুরুষকে কেন্দ্র করেই উপন্যাসের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে। ১৯০৪ সালে অমরেন্দ্রনাথ দত্ত এই উপন্যাসের নাট্যরূপ দেন। ১৯৩৮ সালে অ্যাসোসিয়েট পিকচার্সের প্রযোজনায় “চোখের বালি” অবলম্বনে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। ২০০৩ সালে বিশিষ্ট পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ এই উপন্যাস অবলম্বনে ‘চোখের বালি’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। উপন্যাসটি ইংরেজিতে ২ বার, হিন্দি ও জার্মান ভাষায় এক-একবার করে অনূদিত হয়। উপন্যাসটা অনেকটা শরৎচন্দ্রের “গৃহদাহ” উপন্যাসের আদলে লেখা। বলতে গেলে দ্বিতীয় গৃহদাহ বলা যেতে পারে। যাই হোক সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিচ্ছি……
###চরিত্র_পরিচিতিঃ–
মহেন্দ্র — উপন্যাসের নায়ক
আশালতা — মহেন্দ্রর স্ত্রী, উপন্যাসের নায়িকা
বিনোদিনী — যুবতী বিধবা,
বিহারী — মহেন্দ্রর বাল্যবন্ধু
রাজলক্ষ্মী — মহেন্দ্রর মাতা
অন্নপূর্ণা — আশালতা ও মহেন্দ্রর কাকীমা
হরিমতি — বিনোদিনীর মাতা ও অন্যান্য।
#সংক্ষিপ্ত_বিবরণঃ–
পিতৃহীন মহেন্দ্র, বড় হয়েছে মা রাজলক্ষ্মীর কাছে। তাই তাঁর কাছে মা’ই সব। মহেন্দ্র বড় হয়েছে তবুও সে তাঁর মা’কে ছেড়ে থাকতে পারে না। মহেন্দ্রর কাকীমা অন্নপূর্ণা। সেও বিধবা। মোটকথা মহেন্দ্র, রাজলক্ষ্মী ও অন্নপূর্ণা এই তিনে মিলে সব সামলাচ্ছে। মহেন্দ্রকে তাঁর মা বারবার বিয়ের কথা বলতেছে কিন্তু মহেন্দ্র কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। কারণ মহেন্দ্রর’র কাছে মনে হচ্ছে বিয়ে করলে সে মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হবে।
একদিন পাশের গায়ের বিনোদিনী’র মা হরিমতি, রাজলক্ষ্মীর কাছে এসে বললো বিনোদিনীর সাথে মহেন্দ্র’র বিয়ে দিতে। বিনোদিনী দেখতে শুনতে ভালো, শিক্ষিতা কিন্তু মহেন্দ্র রাজি হলো না। পরে বিনোদিনী’র অন্য জায়গাতে বিয়ে হয়ে যায় কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিয়ের কিছুদিন পরেই বিনোদিনী বিধবা হয়।
মহেন্দ্র’র বাল্যকালের বন্ধু বিহারী৷ দু’জন একসাথে ডাক্তারি পড়ে৷ একদিন মহেন্দ্র’র কাকীমা অন্নপূর্ণা এসে তাঁর এক ভাগ্নী’র(আশালতা) কথা বললো মহেন্দ্রকে। কিন্তু মহেন্দ্র তাতে ভ্রুক্ষেপ করলো না তখন অন্নপূর্ণা গিয়ে বিহারীকে ধরল। বিহারী রাজি হলো মেয়েকে দেখতে যেতে। একদিন মহেন্দ্র আর বিহারী গেল মেয়ে দেখতে। মেয়ের নাম আশালতা, ডাকনাম চুনি। গিয়ে তো মহেন্দ্র’র নিজেরই পছন্দ হয়ে গেল। শেষমেশ অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে মহেন্দ্র’র সাথে আশা’র(আশালতা) বিয়ে হলো। কিন্তু এই বিয়ে মহেন্দ্র’র মা রাজলক্ষ্মী সহজভাবে নিতে পারলো না। সে আশালতার সাথে দাসীর মতো ব্যবহার করতে লাগলো। আশাকে দিয়ে সারাদিন ঘরকন্না’র কাজ-বাজ করাতে লাগলো। কিন্তু এসব দেখে মহেন্দ্র’র সহ্য হলো না। নতুন বউকে দিয়ে এসব কেন করাবে? তাই মহেন্দ্র তাঁর মায়ের সাথে ঝগড়া করে বউকে নিয়ে আসলো পড়ালেখা করাবে বলে। কিন্তু পড়ালেখা আর হলোনা। নতুন প্রেমে উভয়ই এমন মজলো যে তা আর রাজলক্ষ্মীর সহ্য হলো না। তাই রাজলক্ষ্মী অনুরাগে বাপের বাড়ি যাবার উদ্যোগ নিল। সেখানে গিয়ে রাজলক্ষ্মী, বিনোদিনীর বাড়িতে আশ্রয় নিল। ইতঃমধ্যে অনেকদিন কেটে গেল কিন্তু রাজলক্ষ্মী ফিরে এল না। তখন অন্নপূর্ণা গিয়ে রাজলক্ষ্মীকে বাড়িতে এনে নিজে(অন্নপূর্ণা) কাশী যাবে বলে ঠিক করল। রাজলক্ষ্মীর সাথে করে বিনোদিনীকে নিয়ে আসল। বিনোদিনী বাড়ির লোকেদের মতোই কাজ-বাজ করতে লাগলো আর ওদিকে মহেন্দ্র তো আশাকে নিয়েই আছে। আস্তে আস্তে আশারও একটু একটু ভাব হলো বিনোদিনীর সাথে। আশা তাঁকে বালি(চোখের বালি) বলে ডাকে। আশার সাথে ভাব হলেও মহেন্দ্র বরাবরের মতোই বিনোদিনীকে উপেক্ষা করলে লাগলো। মহেন্দ্র এমন করতো যেন বিনোদিনীকে সে পছন্দই করে না। আশা অনেক বুঝিয়ে-সুজিয়ে মহেন্দ্রকে রাজি করালো বিনোদিনীর সাথে প্রথমবার কথা বলবার জন্য। প্রথমদিন একটু কথা হলো, পরেরদিন আরেকটু, এভাবে করতে করতে তিনজনের মধ্যে গভীর অন্তরঙ্গতা শুরু হলো। এর মধ্যে একদিন বিহারী এসে এসব দেখে বুঝতে পারলো জল কোন দিকে গড়াচ্ছে। তাই সে মহেন্দ্রর মা রাজলক্ষ্মীকে বললো বিনোদিনীকে তাঁর বাড়িতে রেখে আসবার জন্য। কিন্তু মহেন্দ্র আকুপাকু করাতে বিনোদিনীর আর যাওয়া হলো না। অনৈতিক বিষবৃক্ষের বীজ উপ্ত হলো এখানেই৷ বিনোদিনী অবশ্য একটু বেজার হয়েছিলো চলে যাবার কথা বলাতে তাই মহেন্দ্র সেটা বুঝতে পেরে একটু আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা করলো। ঠিক করলো তাঁরা চড়ুইভাতি করতে যাবে পুরনো দমদমের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে সবাই আনন্দে মেতে উঠল। কিন্তু ফিরে আসাতেই আবার অশুভ সংকেত! রাজলক্ষ্মী অসুখে পড়ল। ভয়ঙ্কর রকমের ইনফ্লুয়েঞ্জা। বিনোদিনী অনেক আদর-যত্ন করে রাজলক্ষ্মীকে সুস্থ করে তুলল। কিন্তু মহেন্দ্র খেয়াল করে দেখলো যে ইদানীং বিনোদিনী তাঁকে উপেক্ষা করতেছে। ঘটনাটা ভালোভাবে বুঝবার জন্য সে কলেজের এক্সাম পড়ে গেছে এটা বলে বাড়ি থেকে চলে যাবার পরিকল্পনা করল যাতে বিনোদিনী অনুভব করে মহেন্দ্রকে। কিন্তু এটা শুনে আশার মনে হল সে যেন মহেন্দ্রকে চিরতরে হারাচ্ছে। অনেক বুঝিয়ে মহেন্দ্র শেষে হোস্টেলে গেল। দিনকতক পরে বিনোদিনী চিঠি লিখলো মহেন্দ্রকে। চিঠি পেয়ে মহেন্দ্র বাড়িতে ফিরে আসলো। আবার পুরনো সম্পর্ক গড়ে উঠল আর চলতে লাগলো এভাবেই৷ এর কিছুপর পরে মহেন্দ্র বললো সে কাশী যাবে তাঁর কাকীমা অন্নপূর্ণাকে দেখতে। যে কথা সেই কাজ। মহেন্দ্র বেশ কয়েকদিন থেকে আসলো কাশীতে এরপর বাড়ি ফিরে আসলো। তখন আবার আশা বললো সে কাশী যাবে কাকীমা অন্নপূর্ণাকে দেখতে। মহেন্দ্রও চাচ্ছিলো আশা তাঁর থেকে একটু দূরে যাক কিছুদিনের জন্য যাতে সে বিনোদিনী’কে কাছে পেতে পারে।
ওদিকে বিনোদিনী’কে নিয়ে মহেন্দ্র আর বিহারীর মধ্যে একটা মনমালিন্য চলতেছে। বিহারী এখন আর আগের মতো আসে না মহেন্দ্রদের বাড়িতে। তাই বিনোদিনী তাঁকে একটা চিঠি লিখে পাঠালো। কিন্তু আশা কাশী গেছে শুনে বিহারী আগেই কাশীতে চলে গেছে এটা ভেবে যে আশার কোন সমস্যা হলো নাতো! ভাগ্যক্রমে বিনোদিনীর চিঠি পড়ল মহেন্দ্রর হাতে। এখন মহেন্দ্র তো পাগলপ্রায়। আশাও কাশীতে গিয়েছে এই সুযোগে সে যতটা সম্ভব বিনোদিনীর কাছে আসার চেষ্টা করতে লাগলো। দুজনের মধ্যে এক গভীর প্রেমের সূচনা হতে থাকলো।
কিন্তু বিনোদিনীর মনে ছিলো আরেক বাসনা। সে মনে মনে বিহারীকে চাইতো কিন্তু বাহ্যিকভাবে সেটা মহেন্দ্রকে দিয়ে দেখাতো। বিহারী অনেকদিন যাবত আসেনা তাই রাজলক্ষীকে বলে বিহারীকে নিমন্ত্রণ করালো বিনোদিনী। এটা কিন্তু মহেন্দ্র সহ্য করতে পারলো না। যাই হোক, কিছুদিন পর আশা ফিরে আসলো কাশী থেকে। মহেন্দ্র-বিনোদিনীর প্রেমের কোনোকিছুই জানতো না আশা। আসলে সে কখনও এমনটা ভাবেও নি। কিন্তু মিথ্যা চিরদিন গোপন থাকে না। একদিন বিনোদিনীকে লেখা মহেন্দ্রর একটা চিঠি পেল আশা। দেখে সে বিশ্বাস করতে পারলো না কিন্তু যখন দেখলো যে মহেন্দ্র সেই চিঠিটাই খুজেতেছে তখন সে নিশ্চিত হলো যে ইতোমধ্যেই বিষবৃক্ষ অনেক বড় তার ডালপালাও ছড়িয়ে গিয়েছে। এটাই হচ্ছে উপন্যাসের Climax. এখন মহেন্দ্র নিজেকে লুকাবে কীভাবে? তাই সে এখন বিনোদিনীকে পাবার জন্য জোরজবরদস্তি করতে লাগলো। পরিবারের সাথে তাঁর সম্পর্ক ক্রমশই খারাপ থেকে খারাপতর হতে লাগলো। মহেন্দ্র, বিনোদিনীকে নিয়ে দূরে চলে যেতে চাইলো কিন্তু বিনোদিনী তাতে রাজি হলো না। কারণ সে জানতো এটা মহেন্দ্রর ক্ষণিকের অনুভূতি মাত্র। এতকিছুর পরে বিনোদিনী, বিহারীর বাড়িতে গেল এবং সে বিহারীর সাথে থাকার জন্য বিহারীকে অনুরোধ করলো কিন্তু বিহারী তা মেনে নিলো না। তাই কোনো উপায় না পেয়ে বিনোদিনী তাঁর গ্রামের বাড়িতে চলে গেল। ওদিকে মহেন্দ্র বিনোদিনীকে না পেয়ে ভাবলো হয়তো বিহারীই তাঁকে আশ্রয় দিয়েছে। তাই বিহারীর সাথে সে একপশলা দেখে আসল কিন্তু বিহারীর বাড়িতে বিনোদিনীকে না পেয়ে এবার ধরে নিল যে বিনোদিনী হয়তো তার গ্রামের বাড়িতেই গেছে। তাই সেও বিনোদিনীদের গ্রামের বাড়িতে গেল। গ্রামের লোকেরা এইসব দেখে দু’জনকেই সেখান থেকে চলে আসতে বাধ্য করলো। তখন দু’জনে সেখান থেকে দূরে পশ্চিমে কোথাও থাকবে বলে ঠিক করলো। কিন্তু বিনোদিনীর মনে ছিল বিহারীর কথা। মহেন্দ্রর সাথে আসলেও সে আসলে বিহারীকে খুঁজতেছিলো। কোনোভাবে বিহারীর ঠিকানা জেনে সে(বিনোদিনী) সেখানে গেল। নির্বোধ মহেন্দ্রও তাঁর পিছু নিল। বিনোদিনী গিয়ে বিহারীর বাগানবাড়িতে উঠল। এসবের কিছুই কিন্তু মহেন্দ্র জানতো না। যাই হোক, রাতে মহেন্দ্র, বিনোদিনীর কাছে আসতে চাইলে বিনোদিনী তাঁকে তাড়িয়ে দিল। রাগে, ক্ষোভে, দুঃখে মহেন্দ্র বাড়ি ফিরে আসলো। যার জন্য এতকিছু তাঁকেই হারালো মহেন্দ্র। ওদিকে রাজলক্ষ্মীর আবারও অসুখ করল। এই পারিবারিক অশান্তিতে সে আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিল। মৃতপ্রায় রাজলক্ষ্মী তখন বিহারীকে দেখবার অভিপ্রায় করলো। মহেন্দ্র তখন খুঁজতে বের হলো বিহারীকে। কিন্তু বিহারীকে না পেয়ে মহেন্দ্র ভাবলো বিহারী হয়তো এই সুযোগে বিনোদিনীর কাছেই গিয়েছে তাঁর(মহেন্দ্রর) অনুপস্থিতিতে। মহেন্দ্র তখনই রওয়ানা হল বিনোদিনীর আশ্রয়স্থলে। মায়ের সে কঠিন অসুখ সেদিকে তাঁর কোন ভ্রুক্ষেপ নাই। রাজলক্ষ্মীর অবস্থা ক্রমেই শোচনীয় হতে লাগলো। এর মধ্যেই আবার অন্নপূর্ণা ফিরে আসলো কাশী থেকে। অর্ধমৃত অবস্থাতে জা অন্নপূর্ণাকে পেয়ে রাজলক্ষ্মী যেন কিছুটা স্বস্তিবোধ করতো লাগলো। মহেন্দ্র যে বিহারীকে আনতে গিয়ে পালিয়ে গিয়েছে এটা শুনে নিজের ছেলেকেই ধিক্কার দিতে লাগলো রাজলক্ষ্মী আর বারবার বিহারী’র কথা বলতে লাগলো। শেষে অন্নপূর্ণা নিজেই বিহারীকে খুঁজতে বের হলো। কিছুদিন পর বিহারীকে নিয়ে অন্নপূর্ণা কলকাতায় ফিরে আসল রাজলক্ষ্মীর কাছে। বিহারীর সেবাযত্নে রাজলক্ষ্মী অনেকটাই সুস্থ হলো। এরপর বিহারীর সাথে দেখা হলো বিনোদিনীর। বিনোদিনী নিজের ভুল বুঝতে পেরে বিহারীর কাছে ক্ষমা চাইলো তখন বিহারীও সমস্ত কিছু ভুলে বিনোদিনীকে বিবাহের প্রস্তাব দিল। কিন্তু বিনোদিনী তা আর গ্রহন করে বিহারীকে দোষী বানাতে চাইলো না। কারণ এতকিছুর জন্য বিনোদিনীই দায়ী তাই বিহারীকে বিয়ে করলে সেই দোষের ভাগীদার বিহারীকেও হতে হবে। কিন্তু বিনোদিনী এটা হতে দিতে পারে না। মহেন্দ্রও ফিরে আসলো। নিজের ভুল বুঝতে পেরে সবার কাছে ক্ষমা চাইলো এবং আশালতার সাথে আবারও মিলন হলো। কিছুকাল পরে রাজলক্ষ্মী মারা গেল। তখন এই বিষবৃক্ষকে এখানেই উচ্ছেদ করবার জন্য অন্নপূর্ণা, বিনোদিনীকে নিয়ে কাশীতে চলে গেল। এখানেই উপন্যাসটা শেষ হয়।
ভালোই লেগেছে উপন্যাসটা। আমাদের সমাজেও এরকম ঘটনা অহরহ দেখা যায়। কীভাবে তৃতীয় ব্যক্তির আগমনে একটা সুন্দর সম্পর্ক ধ্বংস হয়ে যায় সেটার অন্যান্য প্রমাণ এই উপন্যাসটা। তাছাড়া বন্ধুত্বের সম্পর্কের মানেটাও বুঝতে পারা যায় বিহারীর আত্মত্যাগের মাধ্যমে। উপন্যাসটা মোটামুটি বড় ছিলো। বিবরণে সবটা বোঝাতে পেরেছি কিনা সন্দেহ। অনেক টার্নিং পয়েন্ট আছে তাই প্লটগুলোও কিছুটা জটিল। যেটুকু পেরেছি ফুটিয়ে তুলবার প্রয়াস করেছি। ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
#গুরুত্বপূর্ণ_লাইনঃ–
★ শিক্ষক যদি শিক্ষার সর্বপ্রধান অন্তরায় হন, তবে অবলা ছাত্রীর সাধ্য কী বিদ্যারণ্যের মধ্যে পথ করিয়া চলে।
★ ভোগসুখের এই ভয়ংকর অভিশাপ যে, সুখ অধিক দিন থাকে না, কিন্তু বন্ধন দুশ্ছেদ্য হইয়া উঠে।
★ নেশার পরেই মাঝখানে যে অবসাদ আসে, সেটা দূর করিতে মানুষ আবার যে-নেশা চায় সে-নেশা আশা কোথা হইতে যোগাইবে।
★ যাহার পালাইবার রাস্তা নাই, তাহাকে আবার বাঁধিবার চেষ্টা কেন।
★ অসীম বিশ্বসংসারের অনন্ত প্রবাহের মধ্যে ভাসিয়া চলিয়াছি, তরণী ক্ষণকালের জন্য কখন কোথায় ঠেকে, তাহাতে কাহার কী আসে যায় এবং কতদিনের জন্যই বা যায় আসে।
★ বিধাতা এতখানি ভালোবাসা দিয়াছিলেন, একটুখানি ভাষা দেন নাই কেন।
★ বিনোদিনী অবিচলিতভাবে কহিল, “পিসিমা, আমরা মায়াবীনির জাত, আমার মধ্যে কী মায়া ছিল, তাহা আমি ঠিক জানি নাই, তুমি জানিয়াছ—- তোমার মধ্যেও কী মায়া ছিল, তাহা তুমি ঠিক জান নাই, আমি জানিয়াছি। কিন্তু মায়া ছিল, নহিলে এমন ঘটনা ঘটিত না। ফাঁদ আমিও কতকটা জানিয়া এবং কতকটা না জানিয়া পাতিয়াছি। ফাঁদ তুমিও কতকটা জানিয়া এবং কতকটা না জানিয়া পাতিয়াছ। আমাদের জাতের ধর্ম এইরূপ—- আমরা মায়াবিনী।
★ নাটকের নায়িকা স্টেজের উপরেই শোভা পায়, ঘরে তাহাকে লইয়া চলে না।
★ বিনোদিনীর হৃদয় কোনো অবস্থাতেই সম্পূর্ণ হাল ছাড়িয়া দিতে জানে না—- নৈরূশ্যকে সে স্বীকার করে না। তাহার মন অহরহ প্রাণপণ বলে বলিতেছে, ‘আমার এ পূজা বিহারীকে গ্রহণ করিতেই হইবে।’………………….. মহেন্দ্রকে বিনোদিনী খুব ভাল করিয়াই জানিয়াছে, তার উপর নির্ভর করিতে গেলে সে ভর সয় না—– তাহাকে ছাড়িয়া দিলে তবেই তাহাকে পাওয়া যায়, তাহাকে ধরিয়া থাকিলে সে ছুটিতে চায়। কিন্তু নারীর পক্ষে যে নিশ্চিন্ত, বিশ্বস্ত, নিরাপদ নির্ভর একান্ত আবশ্যক, বিহারীই তাহা দিতে পারে।
★ যে লোক ভালোবাসে, তাহাকে কেমন করিয়া খুশি করিতে হয়, তাহা হৃদয় আপনি বলিয়া দেয়; কিন্তু যে ভালোবাসে না, তাহার মন কী করিয়া পাইতে হয়, আশা তাহার কী জানে।
★ পুরুষমানুষ তো স্বভাবতই বিপথে যাইবার জন্য প্রস্তুত, স্ত্রীর কর্তব্য তাহাকে ছলে বলে কৌশলে সিধা পথে রাখা।
★ যাহা যথার্থ গভীর এবং স্থায়ী, তাহার মধ্যে বিনা চেষ্টায়, বিনা বাধায় আপনাকে সম্পূর্ণ নিমগ্ন করিয়া রাখা যায় বলিয়া তাহার গৌরব আমরা বুঝিতে পারি না—– যাহা চঞ্চল ছলনামাত্র, যাহার পরিতৃপ্তিতে লেশমাত্র সুখ নাই, তাহা আমাদিগকে পশ্চাতে ঘোড়দৌড় করাইয়া বেড়ায় বলিয়াই তাহাকে চরম কামনার ধন মনে করি।