জাল আবু ইসহাক Pdf Download

d জাল আবু ইসহাক pdf download links

বইয়ের বিবরণঃ

  •  বইয়ের নামঃ জাল
  • লেখকঃ আবু ইসহাক
  • প্রকাশনীঃ প্রান্তিকা
  • কৃতজ্ঞতাঃ অরিজিনাল আপলোডার
  • প্রকাশকালঃ ১৯৮৯
  • সাইজঃ ৩.৬২
  • পাতাঃ ৮৪
  • ফরম্যাটঃ পিডিএফ

বই রিভিউ :

“সূর্যদীঘল বাড়ি” বইটি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। কিন্তু বইটির পান্ডুলিপি তৈরি হয় ১৯৪৮ সালে। তবে সাথে সাথেই বইটি প্রকাশ করা হয়নি। দীর্ঘ চার বছর ধরে ঢাকা এবং কলকাতা ঘুরেও কোনো প্রকাশককেই বইটি প্রকাশে রাজি করাতে পারেননি। হতাশ হয়ে ভাবলেন হয়তো ডিটেকটিভ উপন্যাস লিখলে প্রকাশকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব। কিন্তু বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে কিংবা

বিদেশী গল্প নকল করে লেখার মতো রুচি লেখকের হলো না।

.
লেখক আবু ইসহাক পেশায় একজন ডিটেকটিভ ছিলেন। তার পেশায় ও অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা ডিটেকটিভ উপন্যাস লেখার কোন সমস্যা হবে না। ১৯৫০ সালের দিকে জাল নোটের একটা মামলা তার হাতে আসে। তিনি ভাবলেন যে এটা এই তদন্তের কাহিনী নিয়েই লেখা যাক একটা উপন্যাস। আর লিখেও ফেললেন “জাল”। সময়টা ১৯৫৪ সালে লেখা শেষ হয় জাল, ঠিক ১৯৫৫ সালে প্রকাশক রাজি হন “সূর্যদীঘল বাড়ি”।
.
এরপর তো ইতিহাস তৈরি হল। তবে বাক্সবন্দি হয়ে গেল “জাল”। “সূর্যদীঘল বাড়ি” প্রকাশের পর “জাল” প্রকাশক করলেন না লেখক। যদি প্রকাশ হতো তবে হয়ত বাংলা সাহিত্য জগতে বিশেষ ভাবে রহস্যোপন্যাসের ক্ষেত্রে একটি মাইলফক হয়ে যেত বলে ধারণা করা হয়। বইটি প্রকাশ পেয়েছে আরও ৩৪ বছর পর, সালটি ১৯৮৮। ১৯৮৮ সালে প্রথম প্রকাশ পায় “জাল”। আর পাঠক পেয়ে যান একটি ভিন্ন স্বাদের বই।।
.
“জাল” বইটি আলাদা হবার এখানে কারণ রয়েছে। বিশেষ ভাবে যদি বলা হয় তবে এটা সেই একশন, মারামারি, গোলাগুলি টাইপের রহস্য বা ডিটেকটিভ উপন্যাস নয়। এটা তদন্ত ও মস্তিকের খেলা। বলা যায় এটি গতানুগতিক ডিটেকটিভ উপন্যাসের বাইরে থেকে আলাদা ভাবে লেখা হয়েছে। লেখক তার নিজস্ব তদন্ত ও মৌলিক পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন এই বইটি লেখার সময়।
.
এবার কাহিনী প্রসঙ্গে আসা যাক,
সদ্য দেশ ভাগ হয়েছে। চারদিকে দাঙ্গা আর হানাহানি চলছে। ঘটনা এই বাংলাদেশের মানে তখন পূর্ব পাকিস্তান। নিজের ভিটে মাটি ছেড়ে বাচার তাগিদে মানুষ পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসছে। এরই মাঝে একদল উঠে পরে লেগেছে টাকা জাল করতে। প্রতিদিন জাল নোটের খবর থানায় আসছে। প্রশাসন অস্থির, কি করা যায়। কারণ জাল টাকা দিয়ে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করা সম্ভব, চাইলে দেশের নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেয়া সম্ভব। তাই প্রশাসন চাচ্ছিল জাল নোটের কারবারীদের ধরতে।
.
তাই এই চক্রের তৎপরতা ঠেকাতে মাঠে নামে পূর্ব পাকিস্তানের গোয়েন্দা বিভাগ। এই গোয়েন্দা বিভাগেরই স্পেশাল অফিসার আলী রেজা। আলী রেজার অধীনে থাকা এক অফিসারের নাম হচ্ছে ইলিয়াস। চৌকষ বুদ্ধিসম্পন্ন এই অফিসারের কল্যাণেই জাল নোট পাচারকারীদের একটা চিঠি হাতে পায় গোয়েন্দা বিভাগ। কিন্তু বিধিবাম! চিঠিটা লেখা দুর্বোধ্য এক ভাষায় কিংবা বলা যায় সাংকেতিক কোনো গুপ্ত ভাষায়।
.
তবুও ইলিয়াস হাল ছাড়েন না। শেষ পর্যন্ত তিনি চিঠির পাঠোদ্ধার করেন। আর তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। তিনি যেন পণ করেছেন ধরেই ছাড়বেন। মাঝে তিনি তার উপরের অফিসারের কাছে কিছু ঘটনা লুকিয়ে রাখেন। কারণ তার ধারণা ছিল তাদের মধ্যেই কেউ পাচার চক্রের সদস্য রয়েছে। তাই তার সঙ্গী হয় কিছু চৌকষ সৎ অফিসার। এই দিকে এক তোতলা দরবেশের ভক্ত হয়েছেন তার বস মিস্টার আলী রেজা। সেই বিষয়েও তদন্ত করা হচ্ছে।
.
এই দিকে এক রিফিউজ হিসেবে আসা পরিবার মিস্টার জাফর আহমেদ আটক হন মিথ্যা জাল টাকা রাখার কেসে। তার মেয়ে রোকসানা বাবাকে ছাড়ানোর জন্য দিন রাত সাহায্য চায়। অপর দিকে ইলিয়াসকে গোয়েন্দা কাজে সহায়তা করে। যাতে করে তার বাবাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারে।
শেষ পর্যন্ত কি হয়?
.
বইটি পড়ার পর সবার বেশ অবাক হতে হবে। যারা পড়েছেন তারা পড়ে পাঠপ্রতিক্রিয়াতে বেশ অবাক হয়েছি এটাই বলবেন। এর অবশ্য কারণ রয়েছে। কারণ হচ্ছে গত শতকের মাঝামাঝিতে বসে এমন দুর্দান্ত ডিটেকটিভ উপন্যাস লেখা সত্যিই যে কাউকে অবাক করবে। তদন্তের শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত পাঠককে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখবে বাস্তবমুখী, প্রাঞ্জল আর সাবলীল বর্ণনাভঙ্গি।
.
পড়ার সময় একবারও বিরক্তবোধ হবে না। লেখকের সাবলীল ভাষা ও প্রাঞ্জল বর্ননা পাঠকে মুগ্ধ করবে। বইয়ের সাব প্লট হিসেবে লেখক উপস্থাপন করেছেন একজন তোতলা দরবেশ কে। পাঠকের মনে কোন বিরক্তবোধ আসবে না। লেখক যেন এখানে মজার ছলেই মনে করিয়ে দিলেন সেই সময়ের দুর্ধর্ষ সব অপরাধীরা নিজেদের পরিচয় গোপন করতে দরবেশ বা ভণ্ড পীরের ছদ্মবেশ নিতো। এখনকার সময়েও যে অপরাধীরা ধর্মের লেবাস গাঁয়ে জড়ায়; তা আর হলফ করে বলার দরকার নেই।
.
এক দিকে একটু খারাপ বা বিরক্ত বলা যায় ক্রিপ্টোগ্রাম। এখানে একটু বেশি বিস্তারিত করতে যেয়ে মনে বেশি বর্ননা করা হচ্ছে, তবে সাবলীল বাচনবঙ্গির কারণে সেটা পাঠক বেশি বিরক্তবোধ করবে না। এছাড়া ইলিয়াস আর রোকসানার প্রেম ও রোমান্সকে লেখক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন।
.
তবে গত শতকের ডিটেকটিভ উপন্যাস; কথাটা শুনতেই আধুনিক কালের পাঠকের মনে যে ব্যাকডেটেড কাহিনীচিত্র ফুটে ওঠে; তার ছিটেফোঁটাও ছিল না এই উপন্যাসে। বরং অনেক বেশী সমসাময়িক মনে হয় কাহিনীর প্রেক্ষাপটে। আর লেখকের যে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনাভঙ্গি; সত্যিই মুগ্ধ করার মত। পারফেক্ট না বললেও সময়কাল ও অন্যান্য ব্যাপারগুলোকে বিবেচনায় নিলে দুর্দান্ত বলতেই হয়।
.
এটা মনে হতেই পারে যে এই বইটি প্রকাশ হতে এত দেরি কেন হল। ৩৪ বছর লেগেছে এই বইটি প্রকাশ হতে। বাক্সবন্দি থেকে বইয়ের পাতায় আসতে সময় লাগলেও বইটি আপনাকে দারুণ ভাবে রোমাঞ্চিত করবে। বাস্তবধর্মী তদন্ত, মৌলিক তদন্ত পদ্ধতি, ক্রিপ্টোগ্রাম, ছদ্মবেশ, অদৃশ্য কালির ব্যবহার, প্রেম, সাবপ্লট বর্ণনা এবং টান টান উত্তেজনা – পুরো বইটাতে একজন রহস্য প্রেমী উক্ত ব্যাপারগুলো দারুণভাবে উপভোগ করবে। তবে “জাল” এর জাল সম্পর্কে জানতে পড়ে ফেলুন বইটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *