kauri burir mandir Pdf book free Download and review:
- বইয়ের নামঃ কাউয়াবুড়ির মন্দির
- (writter) লেখকঃ অভীক সরকার
- কৃতজ্ঞতাঃ অরিজিনাল আপলোডার
- book প্রকাশকালঃ ২০২০
- সাইজঃ ৩১ এমবি
- Total পাতাঃ ২২৪
- File ফরম্যাটঃ পিডিএফ
কাউরি বুড়ির মন্দির Pdf Download free link:
দুঃস্বপ্নের পুরোনো শশান
সেদিন টিউশনি শেষ করে ফিরতে ফিরতে কিছু টা রাত হয়ে গিয়ে ছিল। যদিও ছাত্র টা বলে ছিল স্যার আজকে না হয় আমাদের বাসায় থেকে যান। আকাশের অবস্থা ও ভালো মনে হচ্ছে না।
কিন্তু আমার তাতে কোনো আগ্রহ হলো থেকে যাওয়ার। তাছাড়া বাড়িতে বাবা মা একা। বৃদ্ধ মানুষ। এই ভেবে একটা ছাতা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।
রাত তখন ঠিক এগারোটা কি সোয়া এগরােটা বজে হয়ত। বাহিরে কি ঘুটঘুটে অন্ধকারের একটা ছাপ পড়ে আছে। আলোহীন নিজের হাতটা কে চোখে পড়ছে না। ফোনের লাইটা অন করলাম ।
গ্রামের রাস্তাগুলোর কি নির্জন একা হয়ে না কাটে প্রতি টা রাত। কোনো পথিকের অপেক্ষায় থেকে কেটে যায় তার সমস্তটা অন্ধকার। এই সব ভাবছিলাম আর নিজেই পথের পথিক হয়ে হাটছিলাম।
হঠাৎ করেই ফোনের লাইট টা নিভে গেল। কিছু দেখতে পারছি না। বুঝতে পারলাম ফোন টা বন্ধ হয়ে গেছে। হয়ত ব্যাটারি টা নড়ে গেছে। তাই হয়ত বন্ধ হয়েছে।
অনুমান করেই ফোনের পিছনের কভার টা খুললাম। খুলে ব্যাটারিটাকে হাত দিয়ে স্পর্শ করে বুঝতে পারলাম যে নাহ্ কোনো সমস্যা হয় নি ব্যাটারির। কেননা ব্যাটারির পাশে যে ছোট্ট কাগজের পুটলিটা দিয়ে শক্ত করে লাগিয়ে ছিলাম। পুটলিটা সেই আগের মতোই রয়েছে।তবুও আন্দাজে ফোনের ব্যাটারিটা খুলে জিহ্বায় লাগিয়ে দেখি চার্জ আছে। তাই আবার যেই মাত্র ব্যাটারিটাকে পুটলি দিয়ে ফোনে লাগাব। ঠিক সেই মুহূর্তে পুটলিটা হাত ফসকে পড়ে গেল কোথাও।
বার দুয়েক খুঁজাখুঁজি করলাম। কিন্তু কোথাও পুটলিটা কিংবা পুটলিটার মত ছোট বস্তুও হাতে লাগল না। এরই মধ্যে আবার আকাশে বাজ পড়তে শুরু হয়ে গেল। বাতাস বইছে আর সাথে কি যে ভয়াবহ ভাবে আকাশে বিজলি দিচ্ছে।
ঘুর বিপদে পড়ে গেলাম মনে হচ্ছে । কি করব বুঝতে পারছিনা। তখন হঠাৎ একটা জমকালো বিজলি দিয়ে পাশে কোথাও বাঁজ পড়েছে। সেই সাথে আমার চোখে পড়ল পুরনো মন্দির টা।আগে এ গ্রামে প্রচুর হিন্দু বসতি ছিল। তারা এখন অন্যত্রে স্থানান্তরিত হয়ে গেছে। তাই সেই মন্দির এখনও রয়ে গেছে।
মন্দির টা দেখে বুঝতে পারলাম কিছুটা সামনে এগোতে পারলেই ল্যাম্পোস্টের আলো পাওয়া যাবে।তাই আমাকে সেই অব্দি পৌছানোর জন্য আলোর প্রয়োজন। কিন্তু কি লাভ হবে। আলো কোথায় পাবো। আশে পাশে কোনো বাড়িও নেই। তাছাড়া ফোন টা ও বন্ধ হয়ে আছে।
তাই ভাবলাম বিজলির আলোয় যতটা পথ দেখা যাবে ততটা পথ না হয় দৌড়ে এগিয়ে যাব।তাই ছাতাটা এক হাতে নিয়ে বিজলির চমকানোর সাথে সাথে আমিও দৌড়াতে লাগলাম।যেন আমি নিজেই তখন এই অন্ধকার পথের জন্য বিজলি হয়ে গিয়েছি । এভাবে দৌড়াতে দৌড়াতে এক পর্যায়ে ল্যাম্পোস্টের আলোর কাছাকাছি চলে এলাম।
কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো বেশ খানিকটা দূর থেকেই একটা সমস্যা আমার চোখে পড়ছিল ! ল্যাম্পোস্টের আলো টা একবার জ্বলছে আবার নিভে যাচ্ছে। যেন সে ও আকাশের বিজলির মত বিজলি দিয়ে উঠতে চাচ্ছে।কিন্তু এমনটা ত হবার কথা না। দিনের বেলায় ত আজকে প্রচন্ড রোদ ছিল। তাহলে ত সৌর প্যানেলের চার্জও শেষ হয়ে যাবার কথা না!
আমি কাছে এসে পুরো থমকে গেলাম। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সৌর প্যানেলটার ঠিক উপরে কিছু একটা চিৎকারের শব্দ শুনা যাচ্ছে! আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। আবার নিজেই নিজের প্রতি বিরক্ত হলাম। না এমন টা ত আমার ভাবার কথা না। আমাকে ভয় পেলে হবে না। আমি কিছুক্ষণ ল্যাম্পোস্টের নিচে দাড়িয়ে রইলাম।
ভালো ভাবে বুঝতে পারছি না কি হতে পারে এটা।বিজলির আলোয় নির্ঘুম রাতের পথ টা যেমন দেখা যাচ্ছিল। সেই জায়গাটা তার চেয়ে ও ঝাপসা দেখাচ্ছে । কিছু বুঝতে পারছি না। ধীরে ধীরে কান্নার আওয়াজ বেড়েই চলেছে । তার সাথে বৃষ্টি পড়াও শুরু হয়ে গেছে। তখন স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল কান্নার আওয়াজ টা।মনে হচ্ছে কোনো নবজাতক শিশুর কান্না!
আমার তখন টিউশনিতে যাবার সময় এক মুরুব্বি চাঁচার একটা কথা মনে পড়ল। সন্ধ্যা হবার কিছুটা আগে আমি যাচ্ছিলাম। একা একা। তাছাড়া এদিকটা তে কেউ তেমন চলাচল করে না। আমাদের গ্রাম থেকে আমার টিউশনির বাড়িটা অনেক টা দূরে। তার মাঝখানের কিছুটা জায়গা ফসলাদির মাঠ।আর তারপর বাকিটা জায়গা হিন্দুদের পুড়োনো বসতি আছে কিছু। তারপর সোঁজা রাস্তা চলে গেছে ঠিক আমার টিউশনির বাড়ির দিকে।এর মাঝে একটা পুরোনো শশান পরে।আর একটা পুরোনো মন্দির। আর তখন আমি শশানটার পাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম।
তার পর কোথা থেকে যেন এক মুরুব্বি চাঁচা আসলেন।আমার দিক থেকে পিছন থেকে। আমাকে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন বাবা কোথায় যাইবা? আমি হকচকিয়ে বললাম ঐ ত সামনে পূর্ব পাড়াতে যাব।তাকে দেখে আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল কোথাও তাকে দেখেছি। যাই হোক আমি আর আমার মনের ভাবটা প্রকাশ করলাম না তার কাছে। কিন্তু পরক্ষণে তিনিই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। তোমার ফিরে আসতে কি দেরি হবে। নাকি সেখানেই থেকে যাবে।আমি সাথে সাথে ই তার উত্তরে বলে দিয়েছি জ্বি না।তিনি বললেন তাহলে বেশি রাত করে ফিরো না। আমি এই কথা শুনে বেশ কৌতূহলের সাথে জিজ্ঞেস করলাম কেন চাচা? তিনি কিছুটা অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। কেন তুমি কি কিছু যান না? আমি মাথা নেড়ে না করলাম। তখন তিনি বললেন এই যে পুরোনো শশান টা দেখতে পাচ্ছ। রাতের বেলায় এই জায়গা টা তোমার জন্য খুব ই বিপদ জনক। কখনও একা একা এদিক টাতে যেয়ো না।এই বলার পর তিনি আর কিছু না বলেই। কিছুটা দ্রুত পা ফেলে চলে গেলেন। কিন্তু আমার তার কথা বিশ্বাস হলো না। মনে মনে তার প্রতি আরও রাগ হয়ে বললাম, আরে কি যে বলেন ভূত বলতে কিছু নেই।
কিন্তু এখন আমার সেই সন্ধ্যার আগে বলে যাওয়া চাঁচার কথা টা মনে হচ্ছে সত্যি। কারণ আমি এখন যে জায়গা টাতে দাড়িয়ে আছি। সেটা শশানের সামনের ল্যাম্পোস্টের নিচে। এই সব কথা ভাবতে ভাবতে আবার শুনা যাচ্ছে পাশে কোথায় যেন ডুলের আওয়াজ! সাথে হারমনিয়ামের বেসুরা শব্দ!
আমি তখন পুরোপুরি ভয় পেয়ে গেলাম।অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে। মনে হচ্ছে সেই বৃষ্টি র সাথে সাথে আমার মনের সাহস টুকুও পানির সাথে ভেসে যাচ্ছে। কেননা আজ প্রায় পনেরো বিশ দিন হলো এই রাস্তা দিয়ে আসা যাওয়া করছি। কখনো কোনো দিন এমন মনে হয় নি।
হঠাৎ ল্যাম্পোস্টের বাতিটা পুরোপুরি আগের মত জ্বলে উঠল। আমি উপরের দিকে তাকালাম। আর যা দেখলাম ল্যাম্পোস্টের বাতি সে একেবারেই নিভে গেছে এখন! কিন্তু যে আলো টা ছড়াচ্ছে। তা একটা শিশুর চোখ হতে!
আমি বুঝতে পারছি না কি করব। কোথাও দৌড়ে পালাবার মত জায়গাও নেই। তাই চোখ বুঝে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলাম।
কিছুক্ষণ পর চোখ খুলতেই দেখি বিশাল চেহারা দারী একজন মানুষ আমার মাথায় একটা বড় পাথর দিয়ে আঘাত করতে যাচ্ছে! আর খিল খিল করে হাসছে।
আর হঠাৎ আমি চিৎকার করে উঠি। ঘুম ভেঙে যায়। আর দেখি আম্মা আমার বালিশের পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছেন।আম্মা সাথে সাথে আমাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করল বাবা কি হয়েছে! চিৎকার দিয়ে উঠলে কেন? আমি আম্মাকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকি না আম্মা কিছু না। একটা দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম।
এই বলে আম্মাকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়ি।
কাউরি বুড়ির মন্দির বইটি কেমন লাগল জানাবেন, আর রিভিউ শীগ্রই দেওয়া হবে।