রাসূল সা. হৃদয়ের বাদশা Pdf Review

muhammad sw hridoyer badsha pdf
বইয়ের নাম: রাসূল সা. হৃদয়ের বাদশা pdf
মূল লেখক: রাশীদ হাইলামায , ফাতিহ হারপসি
অনুবাদক: মুহাম্মাদ আদম আলী
প্রকাশনি: মাকতাবাতুল ফুরকান
পৃষ্টা সংখ্যা:৪৯৬ , credit রবিন খান
মূদ্রণ মূল্য:৮০০.০০
 

বই নিয়ে আলোচনা: হৃদয়ের বাদশা-১

সীরাত কেন পড়া উচিত?
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এবং বিভিন্ন দলীয় কোন্দল ও দ্বন্দ্ব থেকে ঈমান নিয়ে বাঁচার একটাই উপায় তাহলো রাসূল সা. ও তার প্রিয় সাহাবাদের সীরাত বা জীবনী অধ্যয়ন করা যা পূর্ববর্তী ইমামরা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ করে গেছেন।
যে উদ্দেশ্য আল্লাহ রাসূল সা. কে আমাদের জন্য হেদায়েত স্বরূপ পাঠিয়েছেন, বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও আমরা ছুটে চলছি তার উল্টো পথে। এই ভুল পথে ছুটে চলা বন্ধ করে সঠিক ও সত্যের পথে থাকার জন্য রাসূল সা. এর সীরাত চর্চার বিকল্প নেই।
মুহাম্মাদ সা. হৃদয়ের বাদশা বইটি সংগ্রহ করার সামান্য পিছনের ইতিহাস ।
২০১৯ এর নভেম্বরে Back pain ট্রিটমেন্টের অংশ হিসেবে ডাক্তারের দেওয়া ৯৬ ঘন্টা বেড পানিশমেন্ট যাতে যন্ত্রণায় পরিনত না হয় সেই জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পূর্বেই বাসা থেকে রাগিব সারজানির তিনটি বই সাথে নিয়ে নিই।
কিন্তু মাত্র ৩০ ঘন্টার মাথায় তিনটি বইই পড়া শেষ হয়ে যায় যেহেতু বইগুলো ছোট আকারের ছিলো। গিন্নীকে বললাম বাসার টেবিলের উপর রাখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি পড়ার জন্য নিয়ে আসতে, হঠাৎ মনে পরে, অনেকদিন পূর্বেই পছন্দের তালিকায় রাখা সীরাত বই মুহাম্মাদ সা. হৃদয়ের বাদশা এর কথা। সাথে সাথে যোগাযোগ করি মাকতাবাতুল ফুরকান এর সাথে আগামীকালই তারা বইটি পৌঁছে দিতে পারবে কিনা? আলহামদুলিল্লাহ তাঁরা যথাসময়েই বইটি আমার হাসপাতালের বিছানা পর্যন্ত পৌছে দিতে সক্ষম হয়। পরবর্তী দুদিন সময় কাটে হৃদয়ের বাদশার সাথে।
আমি বইটির ভূমিকা থেকেই সামান্য উক্তি শেয়ার করছি যা থেকে বইটির ব্যপারে কিছু ধারনা পাবেন আশা করি।
ভূমিকাতে বলা হয়েছে, “আমরা বিশ্বাস করি এটা রাসূল সা. এর জীবনী নয় বরং তার প্রিয় সাহাবীদের চরিত্র, আচরন, বক্তব্য এবং মন্তব্য থেকে ঐতিহাসিক চেতনাকে সংরক্ষণ করার একটি প্রয়াস মাত্র। আমরা তার এমন জীবনকে চিত্রায়িত করতে চাই না, যা তিনি একাই যাপন করেছেন বরং তিনি তার চারপাশের মানুষকে নিয়ে যে সামগ্রিক জীবন যাপন করেছেন তাই বর্ণনা করতে চাই। আমরা একটা আদর্শ জীবন উপস্থাপন করতে চাই, যা ঐশী নির্দেশেই সৃস্টি করা হয়েছিল। ”
পুরো দুটো দিন এই বইটি নিয়েই হাসপাতানের বিছানায় পড়ে ছিলাম। আমি কি এমন কি রয়েছে যার ফলে একটুও ক্লান্তি লাগেনি পুরো বইটি পড়া সম্পন্ন করতে ?
# বইটির শুরুতেই রয়েছে রাসূল সা. এর আগমন পূর্ববর্তী সমকালীন পন্ডিতদের কথা যেখানে তারা বুঝতে

পেরেছিলাম শীঘ্রই নতুন ও শেষ নবীর আগমন হবে।

# হযরত ইবরাহীম আ. থেকে রাসূল সা. এর বংশধারার বিস্তারিত কিন্তু সাবলীল বর্ণনা।
# হস্তিবাহিনী ও যুদ্ধের বিস্তারিত বর্ণনা যা অন্য সীরাত বইগুলো থেকে আমার কাছে অন্যরকম মনে হয়েছে সুন্দর ও সাজানো বর্ণনা কারনে।
# রাসূল সা. এর পিতা আবদুল্লাহ কেও যে হযরত ইসমাইল আ. এর কুরবানির মত ঘটনার পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিলো তার বিস্তারিত বর্ণনা।
# রয়েছে ইয়েমেনের তৎকালীন দুই জ্যোতিষবিদের স্বপ্নের ব্যখ্যা যা একজন হলো সাতীহ। দেখতে ছিলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গহীন মাংসপিন্ডের মতো যার মুখমন্ডল ছিলো পিঠের উপর। এদের সম্পর্কে জানতে হলেও বইটি পড়া আবশ্যক।
ঈমানে অগ্রগতি অর্জন করতে হলে কী যোগ্যতা লাগে?
যারা জীবনে কখনো দু:খ-কষ্ট অনুভব করেনি কিংবা কঠিন পরিস্থিতি অতিক্রম করেনি বা কোন ধরনের সংগ্রাম করেনি তাদের মাধ্যমে ঈমানে খুব বেশী অগ্রগতি অর্জন সম্ভব নয়।
রাসূল সা. এর হাতে ইসলামের যে মহান মিশনের সূচনা ঘটেছিল তা কেবল পোড়-খাওয়া ব্যক্তিদের মাধ্যমেই বহন করা সম্ভব। সেই মানুষরা হলেন তারা, যারা দারিদ্র্যের কশাঘাতের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এবং যারা বিত্তশালী হয়েও হাত খুলে প্রচুর পরিমাণে মানুষেকে দান করার মানসিকতা রাখেন। অপরদিকে যারা সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখে এবং দারিদ্র্য সম্পর্কে কোন ধারণা নেই কিংবা মানুষ কে সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করতে চায় না তাদের দ্বারা ঈমানের অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হয়ে উঠে না।
এই সীরাত গ্রন্থটি পড়ার পূর্বে গত মাসেই পড়েছিলাম সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ এর বিশ্বনবীর (সা.) জীবনী । এটা যখন পড়া শেষ করেছিলাম মনে হয়েছলো এটার থেকে সংক্ষিপ্ত কিন্তু পূর্নাঙ্গ ভালো সীরাত হতে পারে না। এরও ১০ বছর পূর্বে পড়ার সুযোগ হয়েছিলো নঈম সিদ্দীকির মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সা, সাইয়েদ আবুল আলার সীরাতে সরওয়ারে আলম, আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহ.) মোবারকপুরির আর-রাহীকুল মাখতূম এবং সীরাতে ইবনে হিশাম। প্রতিটি বই শেষ করার পর একই অনুভূতি ছিলো, যেনো এর চেয়ে ভালো বই হয় না।
আসলে এক একটি সীরাত এক একটি ফুল বাগানের মতো যার প্রতিটির স্বাধ সৌন্দর্য ঘ্রাণ ভিন্ন রকমের।
এই সীরাত বইটি সেরূপ একটি সুন্দর ফুল বাগানের মতো যতক্ষন এর মাঝে থাকবেন সব কস্ট দু:খ দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় যতক্ষন আমি এই সীরাত অধ্যয়ন করেছি দুনিয়ার সব ভুলে ছিলাম যে পাশের বিছানায় বেসুরো নাকের গর্জনও আমাকে বিরক্ত করতে পারেনি।
প্রকাশক বইটির প্রতি আর একটু নজর দিলে একটি চমৎকার একটি সীরাত বই হতো, আশাকরি পরবর্তী সংস্করণে ত্রুটিগুলো সংশোধন করে চমৎকার একটি সীরাত সকলেকে উপহার দিবে। পবিত্র এই রবিউল আওয়াল মাসে সকলকে চমৎকার এই সীরাত বইটি সংগ্রহ করে পড়ার আমন্ত্রন রইলো।

muhammad-sw-hridoyer-badsha pdf

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *