কাজী নজরুল ইসলাম এর জীবনী pdf download free
Title | নজরুল জীবনী |
Author | আবদুল মান্নান সৈয়দ |
Publisher | ঐতিহ্য |
ISBN | 9789847765563 |
Edition | 1st Edition, 2020 |
Number of Pages | 216 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
নজরুলকে নিয়ে লেখা না হলে এই নির্মম কঠিন প্রবন্ধ আমি জীবনেও পড়তাম না। নজরুলের প্রবন্ধ এবং নজরুলকে নিয়ে লেখা প্রবন্ধ আমি অতি কষ্টে গলাধঃকরণ করবার চেষ্টা করি! অবশ্য এই বইটিকে আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ না বলে প্রবন্ধ বললাম। কারণ বইটিতে নজরুলের প্রায় ২৪ বছরের (১৯১৯-১৯৪২ সাল) সুদীর্ঘ সাহিত্য জীবনের মধ্য থেকে মাত্র ৩টি গুরুত্বপূর্ণ বছরের কর্মসাধনা নিয়ে বিস্তারিত সমালোচনা করা হয়েছে সমসাময়িক কবি-সাহিত্যিকদের রচনার তুলনা-বিচারকে সমন্বয় করে, নজরুল নিয়ে তাঁদের দেওয়া বিবৃতিগুলোকে উপস্থাপন করে; অতীতে বিভিন্ন জনের লেখা বিভিন্ন বইকে দলিল করে গ্রন্থ লেখকের নিজস্ব চিন্তা-চেতনাকে রূপ দেওয়া হয়েছে।
মাত্র ২৪ বছরের সাহিত্য জীবনের ৩টি বছর (১৯২২, ১৯২৮, ১৯৪১)-কে ফোকাস
করে পুরো বইটি সাজানো হয়েছে। তরুণ নজরুল ধূমকেতুর মত আবির্ভাব হয়ে কালের ঊর্ধ্বে চলে যেতে পেরেছিলেন তাঁর তড়িৎ সৃষ্টির নিপুণ কর্মদক্ষতার প্রতিভায়। এই তিনটি বছরে নজরুলের বিদ্রোহ, প্রেম, সংগীত সাধনার সর্বোচ্চ প্রাপ্তি এবং সর্বোপরি বাংলা সাহিত্যের যুগান্তকারী সাহিত্যকর্ম সমূহ রচিত হয়েছে।
শুধুমাত্র ১৯২২ সালেই নজরুলের ৩৮টি কবিতা ও প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। তন্মধ্যে যে কবিতাটি কবিকে নিয়ে গিয়েছিল অনন্য উচ্চতায়; সেটা হলো “বিদ্রোহী” কবিতা৷ প্রথমে ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি কবিতাটি “সাপ্তাহিক বিজলী” পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে এটি নজরুলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ “অগ্নিবীণা”-তে স্থান পায়। ডিসেম্বরের শীতের এক রাত্রিতে বসে নজরুল কবিতাটি লিখেছিলেন। কবিতাটির অন্যান্য বিশেষত্বের চেয়েও এটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে কবিতাটি প্রকাশের পরপরই নজরুল
“বিদ্রোহী কবি” খেতাব পেয়ে যান। নজরুলের নামের সাথে এই বিদ্রোহী সত্ত্বার প্রণয়ের বন্ধন করার সার্থকতা গড়েছে কবিতাটি।
লেখক দলিল-প্রমাণ দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন যে ১৯২৮ সালে নজরুল প্রবেশ করেছিলেন সংগীতের জগতে৷ রাগ-রাগিনীর, সুরের এত বিচিত্রতা তাঁর গানের মধ্যে ছিল যে তাঁর গানগুলোর সুরের ব্যাপারে ধরণ চিহ্নিত করা অনেক সমালোচকের পক্ষে কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়াত। নজরুল তাঁর সাহিত্য জীবনের মধ্যে সংগীত রচনায় ছিলেন সবচেয়ে অভিনিবিষ্ট। নজরুল -সংগীত বিশেষজ্ঞ আবদুস সাত্তারের মতে, নজরুলের রচিত গানের সংখ্যা ৩১৩৫টি। তবে নজরুল -সংগীতের মূল সংখ্যা ৩০০০-৫০০০ এর মধ্যে৷ সংগীতের বিষয়বস্তু এবং সুরের বৈচিত্র্যে নজরুল ইসলামের মতো আর কেউ-ই নন। নজরুল তাঁর গানগুলোকে নজরুল -গীতিকা বলতেন। মাত্র ২৪ বছরের সাহিত্য জীবনে এত এত গান, কবিতা রচনা করেছেন তিনি অপরিসীম সৌন্দর্যে পরিবৃত হয়ে।
এই গ্রন্থটির লেখক নজরুল জীবনের ১৯৪১ সালকে নির্ণয় করেছেন সৃষ্টিশীলতায় নিমজ্জিত হবার বছর হিসেবে। সুস্থাবস্থায় নজরুলের সর্বশেষ লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৪২ সালে। নিস্তব্ধতার আগে কবি লুপ্ত হওয়া সুর পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট ছিলেন। তিনি নিজেও যেন বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর নির্বাক হবার সময় এসেছে। তিনি তখন ধ্যানে মগ্ন থাকতেন, বিভিন্ন সুফী-দরবেশের শরণাপন্ন হতেন। হিন্দু মুসলমানকে একাত্ম করার চেষ্টায় তিনি কতই না পরিশ্রম করেছেন! ১৯৪২ সালের ৯ই জুলাই নজরুল অসুস্থ হয়ে নির্বাক হয়ে পড়লেন। তাঁকে আর জাগানো যায়নি কোনো সময়।
নিজেকে, নিজের সাহিত্যকর্মকে কালের উপযোগী আর কালোত্তীর্ণ করতে অন্যান্য কবি-লেখকদের যেখানে অভিজ্ঞতার দরকার হয়, যুগ যুগ ধরে সাধনার দরকার হয়, সেখানে কাজী নজরুল ধূমকেতুর মতো হঠাৎ করে স্বরূপে আর্বিভূত হলেন আর জয় করে নিলেন সবকিছু৷ নিজের জন্য আলাদা একটি সত্তা তৈরি করতে তিনি মোটেও সময় নেননি। তবে তাঁর জ্ঞান ছিল গভীর। আরবি,ফার্সি ভাষার শব্দের সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি নিজের রচনাকে করেছেন সমৃদ্ধ, অথচ তাতে প্রাঞ্জলতার অভাব নেই৷
অবশেষে আমার নিজের লেখা ক’টি লাইন দিয়ে কবিকে আবারও ভালোবেসে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করতে চাই…