বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনী Pdf download

d বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনী pdf download
বই :– অসমাপ্ত আত্মজীবনী
লেখক :- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
সম্পাদনায়:- বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা
প্রকাশনা :- দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড
প্রথম প্রকাশ:- জুন,২০১২
প্রচ্ছদ :- সমর মজুমদার
পৃষ্ঠা সংখ্যা:- ৩২৯
মুদ্রিত মূল্য :- ৫০০

বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনীপাঠ প্রতিক্রিয়া :-

“একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর আব্বা আব্বা বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, হাচু আপা হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি। আমি আর রেণু দুজনই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, আমি তো তোমারও আব্বা। কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না। আজ গলা ধরে পরে রইল। বুজতে পারলাম এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেক দিন না দেখলে ভুলে যায়! আমি যখন জেলে যাই তখন ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস। রাজনৈতিক কারণে একজনকে

বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা আর তার আত্মীয়স্বজন ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়। “

ওপরের লাইনগুলো বাঙালীর শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর হাতে লিখা যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বন্দী অবস্থায় লিখেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, শেষ করে যেতে পারেননি। বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট,লেখকের বংশ পরিচয়,জন্ম,শৈশব,স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা,যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন – এসব কথা উঠে এসেছে।
শেষ হয়ে ও হলোনা শেষ- “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” বইটিতে আমরা পড়লে লক্ষ্য করব, বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে শুরু করে কারাবন্দী জীবনে কাটিয়ে উঠা দুঃসহ নিঃসঙ্গ দিনগুলোর অভিপ্রেত বর্ণনা। কতোটা লড়াই ও দারিদ্র্যতার সাথে নিজেকে সকল প্রতিকূলতার মুখ থেকে শত বিপদে ঝাঁপ দিয়ে একের পর এক দুঃসাহসিক কাজ করেই গেছেন। ছোটবেলায় যখন রাজনীতিতে নাম দিয়ে নিজের সাহসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে শুরু করলেন, তখন প্রতিটি পদে পদেই বাঁধা আসতে শুরু করলেও তিনি থেমে থাকেননি কখনো।
 প্রতিবাদ করার ফলে বরং তাকে জেল খাটতে হয়েছে অনেক বছর। মাত্র ৫৫ বছরের জীবনে তিনি নিজেকে বা নিজের পরিবারকে ঠিক কতটুকু সময় দিয়েছেন তা শুরুতেই উল্লেখ করা লিখাটা পড়লে ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু তিনি লড়েছেন রাজনীতির মাঠে যে রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন অবিসংবাদিত নেতা। অথচ এই রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি ও তিনি পড়ালেখা, বা অন্যান্য কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখেননি। বরং সবগুলোই ঠিক রেখে তিনি এগিয়ে গেছেন সমানতালে। ১৯৩৪-১৯৫৫ সাল পর্যায়ের ঘটে যাওয়া সকল ঘটনায় উঠে এসেছে বইটিতে। বাকি সময়টার বিষয়গুলো তিনি লিপিবদ্ধ করার মতো সেই সময়টুকু পাননি। তাই আজও সেই ইতিহাস অসম্পূর্ণই রয়ে গেলো। বঙ্গবন্ধুকে সবসময় তার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা রেণু বলতেন, জীবনীটা বিশেষ করে রাজনৈতিক জীবনের কর্মকাণ্ডগুলো লিখে কোথাও টুকে রাখতে।কিন্তু বঙ্গবন্ধু তেমন কর্ণপাত না করলেও পরবর্তীতে একটা সময় কারাবন্দী অবস্থায় লিখা শুরু করে দেন।
বঙ্গবন্ধুর “অসমাপ্ত আত্নজীবনী” বইটিকে ভারত উপমহাদেশের রাজনীতির একটি অখণ্ড দলিলও বলা চলে। এজন্য এটি শুধুই শেখ মুজিবুরের আত্মজীবনী না। এই বইয়ে ফুটে উঠেছে একজন মানুষের রাজনৈতিক জীবনের একটি ভূখণ্ডের রাজনৈতিক মূল সন্ধান এবং সে মানুষটির সংগ্রাম। বইটির প্রথম অংশেই ভূমিকার লেখনী দেখতে পাবেন যা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার লেখা। এ কথা মানতেই হয়, বাবা এবং মেয়ের মধ্যে তুমুল সাদৃশ্য রয়েছে। বঙ্গবন্ধু যখন জেলে অবস্থানরত তখনই তিনি তার আত্মজীবনী লিখতে শুরু করেন। শেখ হাসিনাও যখন ভূমিকা লিখেন তখন তিনি কারা বন্দী ছিলেন। ২০১২ সালে প্রকাশিত এই বইতে অনেক পেছনের ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। ১৯৬৭ সালে জেলে বসে লিখিত শেখ মুজিবুর রহমানের চারখানা খাতা ২০০৪ সালে শেখ হাসিনা হাতে পান। ফলে তা বই হিসেবে প্রকাশ করা বাস্তবায়ন হয় ২০১২ সালে। বইটিতে শেখ মুজিবুরের হস্তলিপির বিভিন্ন ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে। বইটিতে বঙ্গবন্ধুর বিখ্যাত একটি লাইন হলো – This may be my last message, from to day Bangladesh is independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved.
লেখক পরিচিতি:-
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চ ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ.ডিগ্রি লাভ করেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে অধ্যয়ন করেন। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর এই অর্জন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অন্যতম প্রেক্ষাপট রচনা করে।
১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতির আসনে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কতিপয় উচ্চাভিলাষী সদস্যের হাতে তিনি নিহত হন।
ব্যক্তিগত মতামত অনুযায়ী, বইটি তেমন খারাপ লাগার কিছু না। পড়লে অনেকটা অসাধারণ বলে মনে হয়। নিজেকে আবারো নতুনভাবে আবিষ্কার করা যায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ত্বের ইতিহাসের গোড়াপত্তনে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখার সাধ্য আমার নেই।আমার মতামত হলো শুধু অনুবাদেই নয়,বরং বিশ্বের কাছে মহান নেতাকে তুলে ধরতে অধিকবার গবেষণা করে পাঠ্যপুস্তকে বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা ও বিদেশে লাইব্রেরী গুলোতে বঙ্গবন্ধুর বিষয়গুলোকে স্থান করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
বই নিয়ে হোক কলরব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *