হামিদা আপুর লেখা আমার বরাবরই অন্যরকম ভালো লাগতো। সেই ভালো লাগা থেকেই আমি “শিকড়ের সন্ধানে” সিরিজটা পড়া শুরু করি। এবং সত্যি বলতে কি এই সিরিজ পড়ার পর আমি নতুন করে কুরআনের তাফসীর পড়ার তীব্র আগ্রহ বোধ করি।
আমাকে যদি কেউ একবাক্যে বলতে বলেন আমি এই সিরিজ পড়ে কি জেনেছি, আমি বলবো রাসূলগণের ধারাবাহিকতা বা সিলসিলা। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, শুধুমাত্র এই সিলসিলা সঠিকভাবে জানলে কুরআনের তাফসীর বোঝা অনেক সহজ হয়ে যায়।
কুরআন কোন স্টোরিবুক না- রাসূল (সাঃ) এর ওপর নাযিলকৃত ওহীসমূহ, মানবজাতির জন্য নির্ধারিত জীবনবিধান। কুরআন আমাদের গল্প বলে না, তাই কুরআনের স্রেফ বাংলা অর্থ পড়ে কুরআনকে বোঝা যায়না, এর পটভূমি জানাটাও জরুরি। আর সেই পটভূমি জানতে গেলে নবী-রাসূলগণের সিলসিলা জানা আবশ্যক।
বইয়ের নাম: | শিকড়ের সন্ধানে |
লেখকের নাম: | হামিদা মুবাশ্বেরা |
প্রকাশনী: | সমকালীন প্রকাশন |
ফাইল ফরম্যাট: | Pdf free Download(পিডিএফ ডাউনলোড) |
Edition | 1st Published, 2020 |
Number of Pages | 289 পৃষ্ঠা |
file সাইজ: | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
আমরা কুরআনে সবচেয়ে বেশি যেই নবীর কাহিনী পাই তিনি হলেন মূসা (আ), সবচেয়ে বেশি যেই জাতির উল্লেখ পাই তারা হচ্ছে “বনী ইসরাঈল”। কিন্তু আমাদের অনেকেরই পরিষ্কার ধারণা নেই “বনী ইসরাঈল” কারা? কেনই বা কুরআনে বারবার তাদের উল্লেখ এসেছে? বারবার মুসলমানদেরকে কেন তাদের রেফারেন্স টেনে সতর্ক করা হয়েছে?
ইউসুফ (আ) জন্মেছিলেন কেনানে, তাঁর বংশধর মূসা (আ) কি করে মিশরে জন্মালেন। বনী ইসরাঈল কে অত্যাচারী ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা করে মূসা(আ) কি পেরেছিলেন স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে নিতে? ইউশা ইবন নুন এর ভূমিকা কি ছিলো?
এ প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে হলে একজন মানুষকে বেশ পরিশ্রম করতে হবে, বিস্তারিত তাফসীর পড়ে, রেফারেন্স ঘেঁটে উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। advanced level এর knowledge না থাকলে কাজটা করা দূঃসাধ্য। এই দুঃসাধ্য কাজটা অনেকাংশে সহজ করে দিয়েছেন আমাদের প্রিয় হামিদা মুবাশ্বেরা আপু, তাঁর “শিকড়ের সন্ধানে” সিরিজে।
যারা কুরআনকে বুঝতে আগ্রহী, কুরআনকে হৃদয়ঙ্গম করতে চান- তাঁদের প্রতি অনুরোধ বইটা পড়ে দেখবেন। সময়টা বৃথা যাবেনা।
শিকড়ের সন্ধানে বুক রিভিউ
শিকড়ের সন্ধান‘র লেখিকা হামিদার সাথে আমার পরিচয় ফেসবুকেই। তার সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কিছু কথা শেয়ার করতে চাই। গম্ভীর প্রসঙ্গে তার প্রাঞ্জল লেখার গুণে মুগ্ধ আমি আবিষ্কার করলাম আমরা তো একই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী ছিলাম! খাতির যেন আরো বেড়ে গেল সেই সুবাদে। বয়সে আমার চেয়ে অনেক ছোট হলেও তার স্বভাবসুলভ মুরুব্বীয়ানায় এবং জ্ঞানে আমার চেয়ে এগিয়ে থাকায় অনেক পরামর্শই দিত সে আমাকে। মনে মনে আমার মেন্টরই মনে করতাম ওকে। এটা সেটা অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতাম ইসলাম সম্পর্কে। একদিন সে বলেছিল “আপু আপনার জন্য IOU তে ভর্তি হওয়া ফরয হয়ে গেছে”। ভালোবাসার ছোটবোনের এত ভারী কথাটা ফেলতে পারিনি। এখন বুঝি, জীবনের অন্যতম সেরা পরামর্শ ছিল সেটি। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যখন ইসলাম নিয়ে পড়া শুরু করলাম, এতদিনের খাপছাড়াভাবে আহরণ করা ‘তথ্য’ গুলোর সাথে ‘জ্ঞান’ গুলো মিলাতে একটু যেন খেই হারালাম। হামিদাকে প্রশ্ন করতাম যখন তখন।
আক্বীদা বিষয়ে পড়তে গিয়ে আমাদের পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বেশ কিছু প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছিল মনের গহীনে। যেমন-
- ১। অন্যান্য কিতাবধারীরা আমাদের চেয়ে আসলে কোন ব্যাপারে ভিন্ন? সবাই তো এক আল্লাহর উপাসনা করছে ভিন্ন নামে!
- ২। খ্রিস্টানরা তো ঈসা (আ) কে আল্লাহর পুত্র মনে করে পথভ্রষ্ট হয়েছে, ইহুদীরা তো মূসা (আ) কে সেরকম কিছু মনে করেনি। তাহলে ওরা কেন এত অভিশপ্ত?
- ৩। খৃষ্টানদের বিচ্যুতি হল শিরক, ইহুদীদের বিচ্যুতি কিসে?
- ৪। খৃষ্টানরা ঈসা (আ) কে উদ্দেশ্য করে ইবাদত করে, ইহূদীরা তাহলে কার ইবাদত করে? কেমন করেই বা করে?
- ৫। ইহুদীরা এত ছোট জনগোষ্ঠী হয়েও এত প্রভাবশালী কি করে? অন্যান্য ধর্মের মানুষদের ব্যপারে কুরআনে কেন এতবার বলা হল না?
এসব প্রশ্ন যখন মনে নিয়ে ঘুরছি আর মানুষ খুঁজছি কাকে জিজ্ঞেস করব, কাকতালীয়ভাবে ফেসবুকে শুরু হলো হামিদার সিরিজ ‘শিকড়ের সন্ধানে’। যেন আমারই প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে আল্লাহ তা’আলা আমার এই বোনটিকে বেছে নিলেন।
স্বাভাবিকভাবেই বিষয়বস্তুর অভিনবত্ব এবং সাবলীল রচনাশৈলীর কারণে সিরিজটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। দীর্ঘ সময়ের পথ অতিক্রম করে যখন সিরিজটি শেষ হল, ভয় হতে লাগল যদি ফেসবুক থেকে হারিয়ে যায় এত অমূল্য লেখা! সবগুলো পর্ব একত্রে জমিয়ে পিডিএফ করা শুরু করলাম নিজের সংগ্রহে রাখার জন্য। তবে অন্যকে পড়তে দেয়ার জন্য তো আর সবসময় পিডিএফ লিন্ক দেয়া সম্ভব হয় না। তাই মন থেকে চাইতাম সিরিজটি যেন বই আকারে প্রকাশিত হয়।
আমার মত অনেকের মনের আশা এবং দুয়ার ফল হিসেবেই হয়তো এবারের বইমেলায় ‘ শিকড়ের সন্ধানে’ বই হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।
আমরা যারা জন্মগতভাবে মুসলিম, তারা এক অজানা কারণে প্রচ্ছন্নভাবে শিখেছি ইহুদীদের ঘৃণা করতে হবে, তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ। কিন্তু কেন অভিশাপ, কিসের অভিশাপ, আমরা তাদের মতই পথ অনুসরণ করে ফেলছি কিনা, আমরা তাদের চেয়ে আসলেই কোনো দিক থেকে শ্রেষ্ঠ কিনা জানতে, বুঝতে চাইলে শিকড়ের সন্ধানে বইটি পড়ার, পড়ে চিন্তা করার এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সংগ্রহে রাখার পরামর্শ রইল।
উক্তিঃ
যদি দেখেন, আপনার দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে আগ্রহ জন্মেছে, তাহলে ধরে নিন এটা আল্লাহর তরফ থেকে আপনার জন্য সুসংবাদ।
আল্লাহ যার কল্যাণ সাধন করতে চান,তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন।
book: Shikorer Sondhane pdf
মহান আল্লাহ কুরআনে শুধু আমাদের জীবনে কি কি করণীয় বা বজনীয় তার নিদেশনা দিয়েই ছেড়ে দেননি বরং উদাহরণ দিয়ে প্রতিটা বিষয় বুঝিয়ে দিয়েছেন। আর এজন্যই বনী ইসরাইলসহ অন্যান্য জাতির ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা যেন সৃষ্টির সেরা জীব ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ হিসেবে যে বুদ্ধিমত্তা, বিশ্লেষণ ক্ষমতা তিনি আমাদের দিয়েছেন তা কাজে লাগিয়ে পূববতীদের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে পারি সেজন্য এসব ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে। তবে আমরা আমাদের মেধাকে এই কাজে ব্যয় করতেও আগ্রহ বোধ করি না।
‘শিকড়ের সন্ধানে’ বইটিতে লেখিকা হামিদা মুবাশ্বেরা আমাদের জন্য এই কষ্টকর কাজটি করেছেন, বলা উচিত মহান আল্লাহ তাকে এই কাজটি করার উসিলা হিসেবে বেছে নিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। দীঘ কয়েকটি বছর অনেক বই পড়ে , লেকচার শুনে তিনি এই বইটিতে কুরআনে বণিত নবী-রাসূলদের কাহিনীগুলোকে ক্রমান্বয়ে সাজিয়েছেন, কোন ঘটনা থেকে আমাদের জন্য কি শিক্ষণীয় আছে তাও তুলে ধরেছেন এবং বইটি লেখার ক্ষেত্রে সহজবোধ্য ভাষা ব্যবহার করেছেন।
Shikorer sondhane pdf free download link: শেকড়ের সন্ধানে pdf
উয়ারী বটেশ্বর শেকড়ের সন্ধানে pdf
শিকড়ের সন্ধানে হামিদা মুবাশ্বেরা
বইটি পড়ার পর যে কোন বয়সের যে কোনো প্রফেশনের মানুষ কুরআনের অনুবাদ নতুনভাবে অনুধাবন করতে পারবেন এবং নিজের জীবনের সাথে relate করতে পারবেন এটা নি:সন্দেহে বলা যায়।
তাই সবার প্রতি অনুরোধ প্রথমে‘ ‘শিকড়ের সন্ধানে’ পড়ুন , এরপর একবার হলেও কুরআন মজিদের বাংলা অনুবাদ, তাফসীর পড়ুন, যেন পরকালে স্রষ্টার সামনে লজ্জায় অবনত হতে না হয়।