স্মৃতিগন্ধা সাদাত হোসাইন Pdf Download – smriti ghonda sadat hossain pdf book free Download
বইয়ের কিছু অংশঃ
ভুবনডাঙা খানিক থমথমে হয়ে আছে। জাহাঙ্গীর ভূইয়া যতটা সম্ভব মহিতোষ মাস্টারের বাড়িতে তার দখল পাকাপোক্ত করেছেন। তিনি আসলে দেখতে চাইছেন এই বাড়ি কিংবা জমি নিয়ে অন্য কেউ দাবি জানাতে আসে কী না। এখন পর্যন্ত অবশ্য সেকরম কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে এতে করে তিনি আরো বেশি বিভ্রান্ত বোধ করছেন। এই এত বড়/বাড়ি, শানবীধানো পুকুর, ফলবতী বৃক্ষ, ফসলের জমি এভাবে ফেলে রেখে কেউ চলে যেতে পারে, এ তার বিশ্বাস হচ্ছে না।
এ কারণেই খানিক আড়ম্বর করেই মহিতোষ মাস্টারের ভিটে দখলে নিয়েছেন তিনি। বাড়ির সামনে এবং জমিতে বড় করে সাইনবোর্ড টানিয়েছেন, ‘ক্রয়সূত্রে এই জমির মালিক জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া । কেউ যদি গোপনে মহিতোষ মাস্টারের কাছ থেকে এসব জমি-জমা কিনে নিয়েও থাকে, তবে তার এতক্ষণে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসার কথা। কিন্তু সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কেউ এলো না । বিষয়টা জাহাঙ্গীর ভূঁইয়াকে আরো বেশি অস্বস্তি দিতে লাগল । নিজেকে অন্ধকার এক কানাগলিতে আটকে পড়া বিভ্রান্ত পথিক মনে হতে লাগল তার।
যেন অদৃশ্য কোনো আতঙ্ক সারাক্ষণ তাড়া করে ফিরছে। এই অস্বস্তি কিংবা অস্থিরতা নিয়ে থাকা যায় না। তিনি তাই যেকোনো মুল্যে এর পেছনে লুকিয়ে থাকা আসল ঘটনাটি জানতে চান। জলিল খা, মোতাহার তালুকদার, তৈয়ব আকন সহ আশেপাশের গ্রামের আরো যারা এই মুহূর্তে এইসব জমি কেনার ক্ষমতা বা সাহস রাখেন, তারা কিনে থাকলে প্রকাশ্যেই এসে তার সামনে দীড়াতেন। কিন্তু যেহেতু আসেননি, তার মানে বিষয়টা গোলমেলে । বা এর পেছনে অন্য কেউ আছে। অন্য কিছু আছে। কিন্তু কে সে? কী? জাহাঙ্গীর ভূইয়া অনেক ভেবে দেখেছেন, এমনকি আশরাফ খা কিনলেও লুকোছাপা কিছু করতেন না । তবে এই মুহূর্তে তার নিজের জমি-জমা নিয়েই যা সমস্যা, তাতে তারও এসব ঝামেলায় আসার কথা নয়। সেদিন এছাহাক অবশ্য বলল, “একটা কথা বলি ভূঁইয়া সাব? ‘কী কথা? ‘আপনি রাগ না হইলে বলব।”
আজকাল এছাহাকের কথা বেশির ভাগ সময়ই সহ্য হয় না জাহাঙ্গীর ভূঁইয়ার । মনে হয় সে বাইরে বাইরে নিজেকে যতটা করিৎকর্মা প্রমাণের চেষ্টা করে, আসলে ভেতরে ভেতরে ততটাই অকর্মণ্য। বরং অনেক গোছানো কাজেও শেষমুহূর্তে তালগোল পাকাতে ওস্তাদ সে। না হলে মহিতোষ মাস্টার কী করে তাকে এত বড় ফাঁকি দিয়ে গেল? অথচ দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা তার ওপর নজর রাখছে বলে নিশ্চিত করেছিল সে। বিষয়টা নিয়ে খুবই বিরক্ত জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া। এছাহাক বলল, ‘আমার ধারণা মহিতোষ মাস্টার ভয় খাইয়া গেছিল। “কী খাইছিল£’ কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া । ভিয়।” কী দিয়ে খাইছিল? জাহাঙ্গীর ভূঁইয়ার কথা যেন বুঝতে’পারেনি এমন ভঙ্গিতে তাকাল এছাহাক। তারপর বলল, ‘আপনার কথা বুঝি নাই ভূইয়া সাব।” “মানুষ কিছু একটা খাইলে তার সঙ্গে তো শালুন-তরকারি কিছু লাগে। লাগে না?
“জি “ভাত খাইলে নুন লাগে। মাছ-মাংস, শাক-সবজি লাগে। তো মহিতোষ মাস্টার যে ভয় খাইছিল, কী দিয়ে খাইছিল? নুন-তরকারি কিছু লাগে নাই? না-কি খালি পানি দিয়ে খাইছিল? মুখ হা করে প্রথমে এক চিমটি ভয় মুখে দিল। তারপর এক ঢোক পানি। ব্যাস, গেলা হয়ে গেল। নাকি?’ এছাহাক কথা বলল না। চুপ করে রইল। এতক্ষণে সে বুঝতে পারল ভূঁইয়া সাহেব তাকে ব্যাঙ্গ করে কথাগুলো বলছেন। জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া বললেন, “মহিতোষ মাস্টাররে তোমার কী মনে হয়? “কী আর মনে হইব? শাস্তশিষ্ট মানুষ ।’ এছাহাক সপ্রতিভ হওয়ার চেষ্টা করল। ‘শান্তশিষ্ট মানুষ যে লেজ বিশিষ্ট হয়, এই কথা জানো?