আদর্শ হিন্দু হোটেল উপন্যাস Pdf download

আদর্শ হিন্দু হোটেল read online  free pdf download – আদর্শ হিন্দু হোটেল রিভিউ

“সব বড় স্বপ্নই শুরু হয় একজন স্বপ্নদ্রষ্টার হাত ধরে। মনে রাখবে, পৃথিবীকে বদলে দেয়ার শক্তি, ধৈর্য আর আকাঙ্খা তোমার ভেতরে সব সময়েই বিদ্যমান”

– হ্যারিট টাবম্যান (দাসপ্রথা বিরোধী নেত্রী)

কিছু উপন্যাস পড়তে নিলে স্থান কাল পাত্রের কোন ধ্যানজ্ঞান থাকেনা; বুঁদ হয়ে যেতে হয় এর প্রতিটি পাতায় পাতায়, মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে হয় এর প্রতিটি শব্দ ও কাহিনীবিন্যাস। কালজয়ী ঔপন্যাসিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “আদর্শ হিন্দু হোটেল” উপন্যাসটিও ঠিক তেমনই। লেখকের লিখনশৈলী নিয়ে কিছু বলার ধৃষ্টতা আমার নেই, তবুও নিজের পাঠ প্রতিক্রিয়া জানাবার লোভ সংবরণ করতে পারছিনা।
এ গল্প রাণাঘাটের বেচু চক্কোত্তির হোটেলের রাঁধুনি বামুন হাজারি ঠাকুরের। রান্নার খাটুনিতে উদয়াস্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে মাসে সাত টাকা এবং দিনশেষে নামেমাত্র থাকা খাওয়া জুটতো তার কপালে। একইসাথে মালিক বেচু চক্কোত্তির অন্যায়ভাবে তার মাইনে থেকে কেটে রাখা এবং পদ্ম ঝির মুখ ঝামটা তো ছিলোই। তা সত্ত্বেও হাজারির জীবনে শান্তির একটুকরো পরশ হয়ে এসেছিলো তিনজন কন্যাসম লক্ষীপ্রতিমাময়ী নারী– গ্রামসম্পর্কের ভাইঝি কুসুম, কুসুমের দুঃসম্পর্কের এক বোন এবং নিজ গ্রাম এঁড়োশোলার হরিবাবুর অষ্টাদশী কন্যা অতসী।
অসাধারণ রন্ধনশৈলীর মাধ্যমে প্রচুর মানুষের মন জয় করে নেয়া এই সহজ সরল মানুষটির ধ্যানজ্ঞান জুড়ে ছিলো একটাই স্বপ্ন– নিজের একটি হোটেল খোলার, যেখানে তাকে মালিকের অন্যায় অবিচার সইতে হবেনা, সইতে হবেনা পদ্ম ঝির তীক্ষ্ণ বাক্যবাণ ও গঞ্জনা। সেই আদর্শ হিন্দু হোটেল, যেখানে কোন অসহায় ব্যক্তিকে টাকার অভাবে না খেয়ে ফিরতে হবেনা, যেখানে কন্যাসম আদরের কুসুমকে মাছের মুড়ো খাওয়াতে হাজারিকে কোনরূপ অজুহাত খুঁজতে হবেনা।
নিত্যবেলা কাজের শেষে চূর্ণা নদীর তীরে বসে সেই স্বপ্নগুলোকে অনুভব করতেন হাজারি ঠাকুর, যে স্বপ্নের জগতে কোন প্রবেশাধিকার ছিলো না বেচু চক্কোত্তি, পদ্ম ঝি কিংবা যদু বাঁড়ুজ্যের মতো পুঁজিবাদী শোষক শ্রেণীর প্রতিভূদের। হাজারির সেই স্বপ্নে অবাধ বিচরণ ছিলো শুধুমাত্র সমাজে নিজের একটি স্বতন্ত্র পরিচয় ও মর্যাদা প্রাপ্তির আশা, এবং একইসাথে আপনজনদেরকে নির্ভয়ে, আনন্দের সাথে নিজের হাতের রান্নাটুকু খাইয়ে মানসিক তৃপ্তি লাভের এক পবিত্র প্রয়াস।
স্বপ্নপূরণের আকাঙ্ক্ষা, এবং একই সাথে সেই স্বপ্নভঙ্গের আগাম ভয়–এ দুটো বিষয়বস্তুকে যেমন সমান্তরালভাবে লেখক উপস্থাপন করেছেন উপন্যাসের প্রতিটি পরতে পরতে, তেমনই পাঠক হিসেবে আমি বাধ্য হয়েছি এই দুটো বিষয়বস্তুকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে; কেননা পদ্ম ঝির মতো কুটিল এবং নেতিবাচক চরিত্রেরা যতদিন সমাজে আছে, ততদিন হাজারি ঠাকুরের মতো স্বপ্নচারীরা যে পদে পদে বাধা বিপত্তি সইতে বাধ্য। উপন্যাসের এক পর্যায়ে এসে ভেবেছিলাম হয়তো আশাভঙ্গের জের ধরে কোন দুঃসহ ব্যথা বা যাতনার শিকার হব বুঝি! কিন্তু ভাগ্যিস, প্রিয় লেখক আমাকে ঠিকই সেই ভয় থেকে বাঁচিয়ে দিলেন বেশ ভালোভাবেই।
হাজারি ঠাকুরের সততা, নিষ্ঠা, অধ্যবসায়, পরিশ্রমী চেতনা এবং আত্মবিশ্বাস তৎকালীন হিন্দুসমাজের পাশাপাশি বর্তমান সমাজের প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষের জন্য আদর্শ ও অনুপ্রেরণাস্বরূপ। একজন স্নেহময়ী পিতা, দায়িত্বশীল স্বামী এবং আদর্শ রন্ধনশিল্পী হিসেবে যে স্নেহ ও মমত্ববোধের পরিচয় তিনি দিয়েছেন, তার প্রতি মুগ্ধ না হয়ে পারা যায়না আসলেই। সবশেষে তার ব্যক্তিসত্তার মাঝে ঠাঁই করে নেয়া ক্ষমাশীলতা ও আন্তরিকতা তাকে প্রতিটি পাঠকহৃদয়ে অমর করে রাখতে বাধ্য।
বাংলা সাহিত্যের কিছু চরিত্র তাদের অসীম সারল্য, মায়া ও স্বপ্নচারী চেতনার কারণেই পাঠকের হৃদয়ে ঠাঁই করে নেন অনায়সেই। হাজারী দেবশর্মা চক্রবর্তীও যেন তাদেরই হয়ে আলোকবর্তিকা বহন করে চলেছেন বছরের পর বছর ধরে। তার এই চরিত্রের মধ্য দিয়ে লেখক আমাদের শিখিয়েছেন যে হাজারো বাধা-বিপত্তি ও লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করা সত্ত্বেও হেরে যাওয়া চলবেনা জীবনে। জীবনকে দেখিয়ে দিতে হবে, আমিও পারি
উপন্যাসটি পড়তে পড়তে প্রবলভাবে ইচ্ছে হচ্ছিলো রাণাঘাটে ছুটে যেতে, দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো আজো হাজারি ঠাকুর তার ঘিয়ে ভাজা লুচি, অসাধারণ স্বাদের চচ্চড়ি ও লোভনীয় নেপালি মাংসের তরকারির পসরা সাজিয়ে আছেন কিনা তার সেই আজন্ম লালিত ও স্বপ্নবিজড়িত “আদর্শ হিন্দু হোটেলে”।
পরিশেষে এটুকুই বলতে চাই, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস পড়তে হয় নির্জনতাকে সাক্ষী রেখে–কোন এক পড়ন্ত বিকেলে, কিংবা জোছনাঝরা রাতে অলকানন্দা কিংবা কাঠগোলাপের চাপা মিষ্টি ঘ্রাণের দোলা পেতে পেতে। আর যারা শত দুঃখের প্রদীপ জ্বেলে রাখতে রাখতে স্বপ্ন দেখতেই ভুলে যান, তাদের জন্য আদর্শপাঠ্য এই বইটি।
উপন্যাসের নামঃ আদর্শ হিন্দু হোটেল
লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ধরনঃ সামাজিক উপন্যাস (ক্লাসিক)
প্রথম প্রকাশঃ অক্টোবর ১৯৪০
প্রকাশনীঃ দে’জ পাবলিশিং
মোট পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ২০০
 

আদর্শ হিন্দু হোটেল free pdf links:

Link01 – Link02 – Link03

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *